মমতা
মমতা ব্যানার্জী

আজ মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখার লড়াই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখার জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার উপনির্বাচন আজ। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আসনে সেই উপনির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীর বিপরীতে আছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। আরো আছেন সিপিআইএম প্রার্থী আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাস। পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিল-মের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর আসনে জয়ী হন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হয়। ডাকা হয় উপনির্বাচন।

ওই বিধানসভা নির্বাচনেই নন্দীগ্রাম আসনে তৃণমূলত্যাগী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যান মমতা। অবশ্য নির্বাচনে তৃণমূলের জয় হওয়ায় মমতাই আবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে হলে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের ছয় মাসের মধ্যে মমতাকে রাজ্যের যেকোনো একটি বিধানসভা আসনে জিতে আসতে হবে। সেই বিধি মানতেই ভবানীপুর আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতাকে ভবানীপুর থেকে জেতানোর লক্ষ্যেই শোভনদেব পদত্যাগ করেন।

সেই জয় নিয়ে তৃণমূল নেতারা শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। দুই সপ্তাহ আগেই দলের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র বলে রেখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরে জয়ী হবেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি এত ভোটে জয়ী হবেন যে আগামী ৫০ বছর কেউ তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে পারবে না। যদি কেউ নির্লজ্জ হয়, তাহলে প্রার্থী দেবে।’ নন্দীগ্রামে মমতা হারেননি, তিনি সেখানে ষড়যন্ত্র ও নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছেন—এমন অভিযোগ করে মদন মিত্র আরো বলেন, ‘নন্দীগ্রামের জবাব হবে ভবানীপুর।’ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সুজাতা মণ্ডল বলেন, প্রিয়াঙ্কা ভবানীপুরে মমতার কাছে এমনভাবে হারবেন যে এই বিজেপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

বিজেপির অনেক হাইপ্রফাইল নেতার পরিবর্তে কেন প্রিয়াঙ্কাকেই মমতার বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে, রয়েছে সেই প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর কোনো কোনো বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা দল ছাড়েননি, উল্টো ধরে রেখেছেন মাঠের সক্রিয়তা। ভোট-পরবর্তী নানা সহিংসতার মামলায় আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। এসবের পুরস্কার হিসেবেই ভবানীপুর উপনির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার যোগাযোগ রয়েছে। ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন বিতর্কসভায় বিজেপির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সেখানে বিজেপির ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। দলের মুখপাত্র না হয়েও বিজেপির হয়ে লাগাতার তিনি সদর্থক ভূমিকা রাখছেন। এতে বিরোধী আসনে বসেও বঙ্গবিজেপি খানিকটা অক্সিজেন পেয়ে চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বলে, ‘বেশ কয়েকটি নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে প্রিয়াঙ্কার নাম ছিল। একজন আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি একজন নারী। মমতার বিরুদ্ধে লড়তে তাই ওই নারীকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তিনিই যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন।’

ভবানীপুরের উপনির্বাচন ঘিরে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিয়োগ করা হয়েছে ১৫ কম্পানি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ওই আসনের অধীন এলাকায়। বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে পাঁচজনের বেশি জমায়েত না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৬টি উপনির্বাচনকেন্দ্রে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। কেন্দ্র অনুসারে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে পুলিশের দায়িত্বও। একেকজন ডিসির সঙ্গে ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্যের দল প্রতিটি থানা এলাকায় মোতায়েন থাকছে।

এদিকে একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ে গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন, ভবানীপুর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বাধা নেই। পূর্বঘোষিত তারিখে অর্থাত্ আজ ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোট নেওয়া হবে।

তবে ভবানীপুর আসনে দ্রুত নির্বাচন করার আবেদন করায় রাজ্যের মুখ্য সচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদিরকে ভর্ত্সনা করেন আদালত। বিচারক বলেন, এই রাজ্যের পাঁচটি আসনে উপনির্বাচন করার কথা থাকলেও মুখ্য সচিব কেবল মমতার আসনে উপনির্বাচন করার জন্য চিঠি লিখেছিলেন নির্বাচন কমিশনে। ‘মুখ্য সচিব নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখে ভুল করেছেন। অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি একজনের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন না’, এমন মন্তব্য করেন আদালত।

এর মধ্যেই বাকি চারটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ অক্টোবর খরদহ, দিনহাটা, শান্তিপুর ও গোসাবা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফল ঘোষণা ২ নভেম্বর। সূত্র : জিনিউজ।

শেয়ার করুন: