সোলাইমানি

সোলাইমানির হত্যাকারী মার্কিন-ইসরায়েলি ২ কমান্ডার নিহত

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানি গুপ্তহত্যার প্রতিশোধে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শীর্ষ দুই কমান্ডারকে প্রতিরোধ যোদ্ধারা হত্যার দাবি করেছে। বুধবার ইরানের আধা-সরকারি সংবাদসংস্থা ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলেছে, ইরাকের উত্তরাঞ্চলের ইরবিলে সামরিক অভিযান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের উচ্চ-পদস্থ দুই কমান্ডারকে হত্যা করেছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

পশ্চিম এশিয়ার সংবাদ প্রকাশকারী সংবাদমাধ্যম দ্য ক্রেডলের বরাত দিয়ে ফার্স নিউজ বলেছে, জেনারেল কাশেম সোলাইমানি এবং ইরাকের জনপ্রিয় মিলিশিয়া গোষ্ঠী হাশদ আল-শাবির ডেপুটি কমান্ডার মাহদি আল-মুহান্দিস হত্যার প্রতিশোধে ওই অভিযান চালানো হয়েছে।

অভিযানে মার্কিন সেনাবাহিনীর রেড হর্স ইউনিটের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেমস সি. উইলিস (৫৫) এবং ইসরায়েলের নাহাল ব্রিগেডের কর্নেল শ্যারন অ্যাজম্যান (৪২) নিহত হন বলে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জ্যেষ্ঠ এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে ক্রেডল মার্কিন ও ইসরায়েলি দুই কমান্ডারকে হত্যায় চালানো ওই হামলার নির্দিষ্ট সময়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।

ক্রেডল বলেছে, প্রথমবারের মতো প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একজন কর্মকর্তা ইরানি এবং ইরাকি শীর্ষ দুই কমান্ডারের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দায় স্বীকার করেছেন।

গত ২৯ জুন ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সাংবাদিক সৈয়দ মোস্তফা খোশচেশম এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ইরাকের উত্তরাঞ্চলের ইরবিলে মোসাদের একটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় মোসাদের তিনজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

কয়েকদিন পর ৩ জুলাই মোস্তফা খোশচেশম কর্নেল শ্যারন অ্যাজম্যানের মৃত্যুর খবর দেন। টুইটে তিনি বলেন, জেনারেল কাশেম সোলাইমানি এবং কমান্ডার মাহদি আল-মুহান্দিস হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর চতুর্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিহত হয়েছেন কর্নেল শ্যারন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠী ওই দুই কমান্ডার পৃথক দুর্ঘটনায় কয়েকদিনের ব্যবধানে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে। গত ২৭ জুন উইলিস কাতারের আল-উদাইদ ঘাঁটিতে যুদ্ধ-বহির্ভূত ঘটনায় মারা গেছেন বলে দাবি করে পেন্টাগন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি তারা।

মার্কিন সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত দৈনিক দ্য স্টারস অ্যান্ড স্ট্রাইপস উইলিস মার্কিন সামরিক বাহিনীর ২১০তম রেড হর্স স্কোয়াড্রনের কমান্ডার ছিলেন বলে জানিয়েছে। ১৩০ সদস্যের এই স্কোয়াড্রন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে এবং দূরবর্তী অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করার জন্য দ্রুত রসদ সরবরাহ করতে সক্ষম।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কর্নেল শ্যারন অ্যাজম্যান ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে গত ১ জুলাই ফিটনেস প্রশিক্ষণের সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে মারা যান। প্রায় ২৫ বছরের চাকরির সময়ে তিনি লেবানন, গাজা এবং অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন।

কিন্তু ইসরায়েলি ও মার্কিন গণমাধ্যমের খবর উড়িয়ে দ্য ক্রেডল নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বলেছে, জেনারেল কাশেম সোলাইমানি এবং আল-মুহান্দিস গুপ্তহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চালানো ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় উইলিস এবং অ্যাজম্যান নিহত হয়েছেন।

ইরাকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে লক্ষ্য করে চলতি বছরে কমপক্ষে দু’টি পৃথক হামলা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝের দিকে ইরানের নাতাজ পারমাণবিক স্থাপনা এবং আঞ্চলিক জলসীমায় ইরানের সামুদ্রিক যানে ইসরায়েলের চোরাগোপ্তা হামলার পর প্রথম হামলাটি হয়। দ্বিতীয় হামলা চালানো হয় গত নভেম্বরে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ গুপ্তহত্যার পর।

গত বছরের ৩ জানুয়ারি বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে মার্কিন ড্রোন হামলায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত জেনারেল কাশেম সোলেইমানি এবং মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিনের মাথায় ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি প্রধান ঘাঁটি লক্ষ্য করে আইআরজিসি কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

দুই শীর্ষ কমান্ডার এবং শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ হত্যার প্রতিশোধ যথাসময়ে নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সময়ে ইরানের কর্মকর্তারা হুমকি দেন। এসব হত্যাকাণ্ডকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা জানায় ইরান। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসনের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে প্রতিশোধের হুঙ্কার দেয় তারা।

শেয়ার করুন: