মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার (১ সেপ্টেম্বর)। ১৯১৮ সালের এ দিনে তিনি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল এম আতাউল গণি ওসমানী। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর তিনি ’৭০ এর নির্বাচনে সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকার এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়।
জানা যায়, যুদ্ধের কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন। বিচক্ষণতার সঙ্গে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন ওসমানী।
১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেল পদমর্যাদা দেওয়া হয়। তিনিই দেশের প্রথম সশস্ত্র বাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। এরপর মন্ত্রিসভায় অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি নিজের এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নেন এবং অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন। এরপর তিনি ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তিনি সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সে বছর ২৯ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। তবে ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন ওসমানী।
এমএজি ওসমানী ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ দেশে এনে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটে দাফন করা হয়। তার সম্মানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, ওসমানী বিমানবন্দর ও নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকায় ওসমানী শিশু পার্ক ও ওসমানী জাদুঘর রয়েছে।