পরীমনির নানার বাড়ি

খুন হন পরীমনির বাবা, মায়ের মৃত্যু আগুনে পুড়ে

দেশের সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মেয়ে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি টক অব দ্য কান্ট্রি। জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রামের বাসিন্দা এই পরীমনি। তিনি সেখানে মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। তার পুরো নাম শামসুন নাহার স্মৃতি।

সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ। ওই কলেজেই পরীমনি পড়াশোনা করেছেন। কলেজের ভর্তির রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুসারে, ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি।

মাদক মামলায় গ্রেপ্তার ঢালিউড নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে আসছে নিয়মিত। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না, এ আলোচিত নায়িকার জীবনের করুণ কিছু কাহিনী। যা যে কারো হৃদয়ে দাগ ফেলবে। জানা গেছে, পরীমনির মায়ের মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। তার বাবাকে করা হয় খুন!

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের কথা। পরীমনি তথা স্মৃতির বয়স তখন মাত্র তিন বছর। তার বাবা মনিরুলের তখন ঢাকায় পোস্টিং। সেখানে একটি বাসায় আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধ হন পরীমনির মা সালমা। এ সময় মাত্র তিন বছরের সন্তান পরীমনিকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার বাবা। ঢাকায় হাসপাতালে কিছুদিন দগ্ধ স্ত্রীর চিকিৎসা করান মনিরুল। পরে তিন বছরের মেয়েকে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে রেখে যান মনিরুল। এর দুই মাস পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমা। তিন বছরেই মা-হারা হন পরীমনি। মায়ের আদর স্নেহ বঞ্চিত সে।

বেলায়েত হোসেন বলেন, সেই তিন বছর বয়স থেকে মাতৃহারা পরীমনিকে তার নানা-নানি ও খালারা লালন-পালন করেছেন। পরীর নানি মরহুমা ফাতিমা বেগম দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষক হই।

স্মৃতি ওরফে পরীমণি সর্ম্পকে দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন আরো বলেন, ছোট থেকে পরীমনি ভালো ছাত্রী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এখন পর্যন্ত এই স্কুল থেকে আর কেউ বৃত্তি পায়নি। মা হারানো এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই অনেক আদর করত।

পরীমনির বাবা খুন হওয়ার বিষয়ে তার ছোট খালা তাসলিমা পাপিয়া বলেন, স্মৃতির বাবা ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। ২০১২ সালের কথা। কোনো একটা কারণে তার চাকরি চলে গিয়েছিল। তখন তিনি গ্রামের বাড়িতে থেকে ব্যবসা করতেন। আমরা শুনেছি, সেই ব্যবসার বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিতে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পরীমনিকে একনজর দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছিলেন নানা শামসুল হক। কিন্তু নাতনিকে দূর থেকে দেখার সুযোগ হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শেয়ার করুন: