চলতি বছর স্বাধীনতার মাসে রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। গত ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদেশি অতিথিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। রাষ্ট্রীয় এ অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের নেগেটিভ সনদ ছাড়া প্রবেশের ক্ষেত্রে ছিল কঠোর বিধিনিষেধ। কিন্তু এ বিধিনিষেধের বেড়াজাল পেরিয়েও অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি যোগ দিয়েছিলেন।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জেগেছে- করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও তারা কীভাবে অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন? বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গতকাল বুধবার বলেন, ‘এ রকম একটা অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বলেছি। ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা করানো এবং পরীক্ষায় প্রাপ্ত নেগেটিভ সনদ প্রদর্শন ছিল বাধ্যতামূলক। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- অন্তত একডজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় ওই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যারা ২১, ২২ ও ২৬ মার্চ দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে মঞ্চে পারফর্ম করেন। এসব শিল্পীর করোনা পরীক্ষার নমুনা নেওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমি থেকে। আর নমুনা পরীক্ষা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসম। সংস্থাটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে ওই দিন পারফরম করা শিল্পীদের করোনা পরীক্ষার রেজাল্টে দেখা গেছে, অনেকেই পজিটিভ। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট কাছেও সংরক্ষিত আছে।
অনুষ্ঠানের সময় করোনা আক্রান্ত ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে অনেকেই স্বীকার করেছেন- করোনা পজিটিভ হয়েও ওই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেছিলেন। এমনকি মঞ্চশিল্পীদের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এ নিয়ে প্রতিবাদও করা হয়।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে করোনা আক্রান্তদের প্রবেশের বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়া অংশগ্রহণকারী রূপসা চাকমা, মৌমিতা রায়, শোভান কুমার দাস, এম হাসান ইসতিয়াক ইমরান, জিএম জাকির হোসেন (প্রোগ্রাম অফিসার), খন্দকার ফারহানা রহমানের (সহকারী পরিচালক) বিরুদ্ধে অভিযোগসংবলিত কাগজপত্র এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।’
ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমা বেগম। তবে চিঠিতে উল্লিখিত করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের বাইরেও ওই দিন আরও বেশ কয়েকজন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি মঞ্চে পারফরম করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।