বিএনপি

বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন

আগামীকাল (শুক্রবার) দেশে উদযাপিত হবে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। যদিও করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ উদযাপনে কিছুটা ভাটা পড়েছে এবার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আদায় হবে ঈদের নামাজ। তবে এবারের ঈদ উৎসবে আনন্দ নেই দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন নির্বাসিত। কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। অপরদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা চলছে। ফলে দেশের সব মানুষের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছরের মার্চে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১০ এপ্রিল তিনি করোনা আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়ায় তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এবারের ঈদ তার হাসপাতালেই কাটছে। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথী ও তার দুই মেয়েও ঈদ করবেন লন্ডনে।

প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু গত দুই বছর কারাগারে এবং এক বছর বাসায় আইসোলেটেড থাকায় তা হয়নি। এবার হাসপাতালে থাকার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না। তবে ঈদের নামাজের পরপরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও নির্ভর করছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থার ওপরে।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এবারের ঈদ বলতে কোনো কিছু হবে না। তিনি গত ৩১ মার্চ সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফিরলেও বেড রেস্টে আছেন। সে কারণে এবার ঈদে নিজ গ্রাম কিংবা অন্য কোথাও যাওয়ার কর্মসূচি নেই। ঈদের দিন চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হাসপাতাল সুযোগ দেবে কি-না তার ওপর নির্ভর করে। পুরো বিষয়টি মহাসচিব বলতে পারবেন।

জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে প্রতিবার ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতেন। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাতেই ঈদ করবেন। তিনি উত্তরার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। পরে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও হাসপাতালে গিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।

এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ করবেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ভারতে আছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তিনি জামিনে থাকলেও (ভারত) দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে এবারও ভারতে ঈদ করতে হচ্ছে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ ঢাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আমেদ, রিয়াজ রহমান, সুকোমল বড়ুয়া, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, তাহসীনা রুশদীর লুনা ঢাকায় ঈদ করবেন।

এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে ঈদ করবেন।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হয়ে ঢাকার শ্যামলীতে বাসায় আছেন। তিনি সেখানেই ঈদ করবেন। যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকায় ঈদ করবেন। যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ঈদ কাটবে কারাগারে ও যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালে ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন নিজ এলাকা গাজীপুরে, নজরুল ইসলাম মনজু খুলনায়, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকায় ঈদ করবেন। শামীমুর রহমান চট্টগ্রামে, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাটে ঈদ করবেন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিক সিকদার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আকতার, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন নিজ এলাকা বগুড়ার শেরপুরে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নিজ এলাকা নরসিংদীতে ঈদ করবেন। ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন ঢাকায় ও যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান পটুয়াখালীতে ঈদ করবেন।

বিএনপি দলীয় এমপি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ চাঁপাইনবাবগঞ্জে, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বগুড়ায়, মোশারফ হোসেন বগুড়ায়, জাহিদুর রহমান পঞ্চগড়ে, আমিনুল ইসলাম চাপাইনবাবগঞ্জে, উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়াল ও বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার ঢাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এবছর করোনা পরিস্থিতি ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে কারও মধ্যে ঈদের আমেজ নেই। ঈদ বলতে যা বুঝায় সেটা এবার হবে না। অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় নিজ নিজ বাসার কাছাকাছি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নামাজের পরে মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করবেন।

শেয়ার করুন: