বাবুল আক্তার

মিতুর জন্য বাবুল আকতারের সেই কান্নার ছবি ভাইরাল

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ড হঠাৎ নতুন মোড় নিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আকতার নিজেই। মিতু হত্যা মামলায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে জিইসির মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পাওয়া গেছে।

তথ্যটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই হতভম্ব দেশবাসী। বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। কারণ স্ত্রীর নিহতের খবরে সে সময় একেবারেই মুষড়ে পড়েছিলেন বাবুল। কান্নায় বুক ভাসিয়েছিলেন।

সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো দেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। সে সময় বাবুলের প্রতি সহানুভূতির দেখাননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সেই বাবুলই মিতু হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডার!বাবুলের এমন অভিনয়ে বিস্মিত গোটা জাতি।

মঙ্গলবার থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বাবুল আক্তারের সেই কান্নায় ভেঙে পড়া ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জানাজার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবুল আক্তার। আর তাকে তার সহকর্মীরা ধরে রেখেছেন।

হত্যার ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বুধবার বলেন, বাবুল আক্তার শুরু থেকে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী নিহতের পর বাবুল আপনজন হারানোর মতোই আচরণ করেছেন। তার কথা তখন সবাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নিজের সোর্স মুসাকে দিয়েই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এ বিষয়ে অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাবুল দোষী সাব্যস্ত হলে তার মানসিক দৃঢ়তা অত্যন্ত বেশি বলতে হবে। নাহলে স্ত্রীর লাশের সামনে এমন কান্নার ‘অভিনয়’ করা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জিয়া রহমান বলেন, মানসিকভাবে অসম্ভব শক্তিধররাই এ ধরনের ‘অভিনয়’ করতে পারে। আসলে হিউম্যান সাইকোলজি অত্যন্ত জটিল। তবে বাবুল আক্তার যেহেতু এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি তাই যে কোনও মন্তব্যের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়।

ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর বাবুল আকতারকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে। মামলার বাদী হয়েছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন।

মামলার পর মোশারফ হোসেন বলেন, মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে পরকীয় সম্পর্ক ছিল বাবুলের। বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন মিতু। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এরই জেরে মিতুকে খুন করা হয়।

শেয়ার করুন: