রাজনীতি

ছাত্রলীগে খোঁজা হচ্ছে ‘হেফাজতভক্ত’

‘আজ মামুনুল হক সাহেবের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ যে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে, বিশেষ করে নামধারী ছাত্রলীগের কর্মীরা, আসলে আজ কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

কেন জানি মনে হচ্ছে কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মীর জন্য আজ গোটা ছাত্রলীগ সংগঠনটি কলঙ্কিত। মামুনুল হক হলেন চার-পাঁচজন বড় আলেমের মধ্যে একজন।

তিনি একটা খারাপ কাজ করার আগে অন্তত ১০০ বার ভেবে দেখবেন তা হিতে বিপরীত হতে পারে কি।...’ এই কয়েকটি লাইন পড়ে মনে হতে পারে আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ এসব লিখেছেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, লেখাটি সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন মারজানের ফেসবুক পোস্টের অংশ। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের সময় তিনি এসব লেখেন। পরে ছাত্রলীগ থেকে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়।

শুধু মারজান নন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামুনুল ও হেফাজতের পক্ষে ফেসবুকে এ ধরনের পোস্ট দিয়েছেন আরো বেশ কিছু পদধারী ছাত্রলীগ নেতা। যে মামুনুল কিছুদিন আগেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁরই পক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের এ ধরনের অবস্থান বিভিন্ন মহলে সংগঠনটিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।

এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা রাখার ঐতিহ্যের সংগঠন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর। সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ে পদ-পদবি হাতিয়ে নিয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীরাও। ফলে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে ছাত্রলীগকে। এ অবস্থায় সংগঠনে অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করা ও তাদের বহিষ্কারের পথে হাঁটছে ছাত্রলীগ।

এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু অভিযোগ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করছি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে কোনো কোনো নেতা অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। আমরা সতর্ক থাকার পরও চোখের আড়াল দিয়ে দু-একজন ঢুকে পড়ে। এই অনুপ্রবেশকারীদের আমরা কোনোভাবেই ছাড় দেব না।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারে থাকায় ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে অনেক জায়গায় অনুপ্রবেশকারীরা সংগঠনে জায়গা পেয়েছে। যখনই এই অনুপ্রবেশকারীদের কেউ দলের বা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখনই তাকে চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়।

সম্প্রতি যারা সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আমরা এরই মধ্যে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। আমাদের কাছে আরো বেশ কিছু অভিযোগ আছে। যারা হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, কেউ কেউ সংগঠন থেকেও পদত্যাগ করেছে, তাদের তালিকা তৈরি করছি।’

জানা গেছে, মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ডের পর বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। কেউ কেউ কমেন্ট করে মামুনুল হককে সমর্থন জানান। এসব নেতার তালিকা তৈরি করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এরই মধ্যে হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন মারজানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন।

রাঙামাটি পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবির হাসানকে গত ৮ এপ্রিল সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করেছিলেন। এর আগের দিন একই অভিযোগে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুককে বহিষ্কার করা হয়।

মামুনুলের পক্ষে ফেসবুকে লেখার কারণে গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক আজিজকে বহিষ্কার করা হয়। একই অভিযোগে সীতাকুণ্ডের আরেক ইউনিয়ন ভাটিয়ারীর ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকেও বহিষ্কার করা হয়।

কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন হেফাজত নেতারা। সে সময় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো। কিন্তু সে সময়ও বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা হেফাজতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা শুরু করেন। এ নিয়ে তাঁরা ফেসবুকেও পোস্ট দেন। সে সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসাইনকে বহিষ্কার করা হয়। একই দিন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ খান রবিনকেও স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে গেল বছরের এপ্রিলে বহিষ্কার করা হয় ফরিদপুর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জিহাদুল ইসলামকে। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাদণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৭ এপ্রিল ২০২১, ২:১৭ অপরাহ্ণ ২:১৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • লাইফস্টাইল

নোংরা শৌচাগার থেকে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ

মূত্রাশয় বা মূত্রথলিতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ প্রদাহ ও অস্বস্তি বাড়ায়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন…

২৬ মার্চ ২০২৪, ১:০২ অপরাহ্ণ
  • ইসলাম

টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে স্বর্ণের নেসাব মানদণ্ড হবে নাকি রূপার?

মুফতি মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম: ইসলামী শরীয়তে স্বর্ণ ও রুপা প্রত্যেকটির নেসাব সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। একটি অপরটির…

২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

যেভাবে রমজানে তেল ছাড়া খাবার বানাবেন

রমজান দরজায় কড়া নাড়ছে। এ সময়টাতে ইফতার থেক সেহরিতে কী, খাবেন ঘরের রাঁধুনির জন্য তা…

৯ মার্চ ২০২৪, ৭:৪৪ অপরাহ্ণ