আশরাফুল আলম খোকন

মামুনুল হকের পেছনে নামাজ পড়া কি জায়েজ? প্রশ্ন খোকনের

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক একজন নারীসহ অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোক, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাঁর কক্ষটি ঘেরাও করেন। যদিও মামুনুল হক সঙ্গে থাকা নারীকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হেফাজতের একদল নেতাকর্মী, মাদ্রাসাছাত্র মিছিল নিয়ে এসে রয়েল রিসোর্ট নামের ওই অবকাশযাপন কেন্দ্রটিতে ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে হট টপিক হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারীকাণ্ড। এ বিষয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপপ্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন। সেখানে তিনি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের কারণে মাওলানা মামুনুল হকের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কি না সেই প্রশ্ন রেখেছেন। পাঠকদের জন্য আশরাফুল আলম খোকনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-

'রিসোর্টে যাওয়া কোনো অপরাধ না। বউ নিয়ে যাওয়াটা অপরাধের মধ্যেই পড়ে না। তবু কেন হেফাজতের মামুনুলকে এই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। তিনি কি আসলেই বিয়ে করেছেন? রিসোর্টের রেজিস্টারেও নাকি তিনি প্রথম স্ত্রীর নাম লিখেছেন। যাকে নিয়ে গেছেন তার নাম লিখেননি। হ্যাঁ, ফান্দে পড়ে তার দাবি তিনি তার একদা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন। ইসলাম ধর্মে জেনা করা অর্থাৎ পরনারী বা পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন (বিয়ে ছাড়া) পাপ।

মামুনুলদেরই সতীর্থ মিজানুর রহমান আজহারীই একটি ওয়াজে বলেছেন, কেউ যদি সমাজকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করে সেটাও জেনার পর্যায়ে পড়ে। সেই সূত্রে মামুনুলের 'নৈতিক স্খলন' ঘটেছে। সুতরাং নৈতিক স্খলন ঘটিয়ে ধর্ম-কর্ম নিয়ে জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার নৈতিক অধিকার কতটুকু মামুনুলের আছে তা দেশের বিজ্ঞ আলেমদের বিচার করা উচিত।

রিসোর্টে যাওয়া পাপের কিছু না। বউ, পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে যে কেউ যেতে পারে। অবসর সময়ে অনেকেই তা-ই করেন। হেফাজতের অনেকেই বলছেন, দেশে গত কিছুদিন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করতে গিয়ে তাদের অনেক নেতাকর্মী নিহত-আহত হয়েছে। হেফাজতের শীর্ষনেতা মামুনুল। বন্ধুর বউকে নিয়ে তিনি অবকাশযাপনে রিসোর্টে গেছেন। হেফাজতিরা আপনারাই একবার তাকে জিজ্ঞেস করেন তো তিনি এর আগে আহত-নিহত কোনো কর্মীর বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়েছেন কি না? তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন কি না?

মামুনুল ফেসবুকে একটি মানবিক (!) বিয়ের গল্প লিখেছেন। তিনি নাকি তার বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করে পুণ্যের কাজ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আরেক গ্ৰুপ বলছে, মামুনুলের কারণেই নাকি তার বন্ধুর সংসার ভেঙেছে। যাক সেই বিতর্কে না যাই। কিন্তু ধরা খাওয়ার পরপর মামুনুল তার বউকে বলেছেন যে বন্ধু জাফর শহিদুলের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি রিসোর্টে গিয়েছিলেন।

যদি সবাইকে জানিয়েই তিনি বিয়ে করেন, তাহলে তার স্ত্রীর কাছে তিনি বন্ধুর স্ত্রী বললেন কেন? কেনই বা মামুনুলের বড় বোন ফোন করে মামুনুলের বউকে বলল, বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করে যাওয়ার জন্য।

মাওলানা সাহেব, আপনি নাকি শায়খুল হাদিস! আপনি এমন একজন শায়খুল হাদিস, শুধু জানেন ইসলামে চারটা বিয়ে করা জায়েজ। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করতে গেলে যে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে সেটা আপনি জানতেন না মাওলানা সাহেব? নাকি ধর্মকে বাপদাদার পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা বানিয়ে নিচ্ছেন।

হেফাজতের সম্মান রক্ষার্থে আপনার পক্ষে অনেকেই হয়তো বক্তৃতা-বিবৃতি দেবেন। হয়তো তাদেরও এ রকম লাইলী-মজনু মার্কা কাহিনি থাকতে পারে। তখন আপনি তাদের পক্ষে বড় গলায় কথা বলবেন। সমাজের সাধারণ মানুষ যদি এসব করে, তা সমাজকে খুব একটা আলোড়িত করে না। আপনাদের মতো আলেম-উলামা যখন এসব অপকর্মে লিপ্ত হন এবং নৈতিক স্খলন ঘটান, তা কিন্তু সমাজকে ভাবিয়ে তোলে। একজন নীতি-নৈতিকতাহীন মানুষ সমাজকে ধর্মের কি বাণী শেখাবে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নিয়ে গিয়ে ধর্মের কী বয়ান মানুষ আপনাদের কাছ থেকে শুনবে? নৈতিক স্খলনের অধিকারী একজনের পেছনে কি নামাজ পড়া জায়েজ? এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে?'

শেয়ার করুন: