লকডাউন

এবারের লকডাউন হবে আরো কঠোর!

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার অথবা মঙ্গলবার থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'আপাতত সাত দিন লকডাউন দিচ্ছি। আশা করছি, এই সাত দিন মানুষকে ঘরের মধ্যে রাখতে পারলে সংক্রমণ রোধ করতে পারব। না হলে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে যাবে। মানুষের নানা বিষয় আছে, সেগুলো সাত দিন লকডাউনের শেষের দিকে বিবেচনা করব, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেব। আপাতত সাত দিন থাকবে।' সরকার বলছে, শনিবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে লকডাউনের বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।

যা খোলা থাকবে: বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবা দেয়- এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু খোলা থাকবে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক, দমকল বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মতো সেবা প্রতিষ্ঠান, ওষুধের দোকান, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি। এর বাইরে শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। তবে শিফট অনুযায়ী সেখানে শ্রমিকরা কাজ করবে।

২০২০ সালে যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সীমিত আকারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছিল। এবারও সীমিতভাবে ব্যাংক খোলা রাখার আভাস দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তবে সেই সময় টানা ৬৬ দিন বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কিন্তু এইবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে, লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চলবে।

এর আগে গত ২৯ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানায় অর্ধেক জনবল, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮টি নির্দেশনা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

কী করা যাবে আর কী করা যাবে না?: * সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউনের সময় জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। * বিয়ে, জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে কোনরকম জনসমাগম করা নিষেধ।

* মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত, গণপরিবহনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। * সবসময় মাস্ক পরা ছাড়াও যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

* জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া রাত ১০টার পরে বাইরে চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। * সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

'কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে': পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন ডা. শারমিন ইয়াসমিন বলছেন, গতবছরের চেয়ে এবার পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। এবার সংক্রমণ হার অনেক বেশি। এবার দেখা যাচ্ছে, একজন থেকে সংক্রমণটা দ্রুত পরিবারের অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, নানা উদ্যোগের অভাবে গতবছরেও লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। ফলে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার লকডাউন কার্যকরে মনোযোগী হতে হবে।

'বাইরে যেভাবে মানুষজন চলাফেরা করছে, সেটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সেজন্য কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এখন পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার মতো সুযোগ নেই। লকডাউন যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসনের সদস্যদের মাধ্যমে কড়াকড়িভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে,' তিনি বলেন।

'যেখানে সম্ভব, সেখানে হোম অফিসের ব্যবস্থা করতে হবে। জরুরি অফিস ছাড়া অযথা যাতে কেউ চলাফেরা করতে না পারে, সেটা কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। সেইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া শপিং মল, ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া উচিত।'

কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লকডাউন কার্যকর রাখা উচিত বলে তিনি পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে সেটা আরো বাড়ানোর জন্যও তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন।

'সেই সঙ্গে সুবিধা বঞ্চিত লোকজনের জন্য যেসব সহায়তার দরকার , সেটাও শুরু থেকেই করতে হবে। সেই প্রস্তুতিও এখন থেকেই নেয়া উচিত,' বলছেন শারমিন ইয়াসমিন।

২০২০ সালে যা হয়েছিল: করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে প্রথম সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত, যা পরে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

বাংলাদেশে এই সময়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'লকডাউন' বলা হয়নি, বরং সরকারিভাবে 'সাধারণ ছুটি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেশজুড়ে 'লকডাউন' করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা-উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল।

বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে 'লকডাউন' না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।

শেয়ার করুন: