মুন্ডুমালা পৌরসভা

নৌকায় ভোট দেয়ায় ১০ জনকে ছাঁটাই

নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের ১ দিনের মাথায় ১০ জন কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে কাউসার আলী রয়েল নামে পরিষদের এক কর্মচারী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। এ নিয়ে পরিষদের সাবেক ও বর্তমান মেয়রসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে তানোর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

থানার অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রকাশনগর গ্রামের বাসিন্দা আবু বাক্কারের ছেলে কাউসার আলী রয়েল (৩০) প্রায় ১০ বছর ধরে পৌরসভায় রোডলাইট ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।

ওই চাকরির জন্য মেয়র গোলাম রাব্বানীকে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। এত টাকা জোগাড় করতে তাকে ভিটেমাটি ও এমনকি গোরস্থানের জায়গাও বিক্রি করতে হয়। এভাবে টাকা নিয়ে হয়রানি হলে ২০১৮ সালের দিকে মৌখিকভাবে তাকে নিয়োগ দিয়ে সান্ত্বনা দেয়া হয়।

পরে মেয়র রাব্বানী রয়েলকে নিয়মিত অফিস ও তার কাজকর্ম করিয়ে নেন। কিন্তু বেতন-ভাতা নিয়মিত দেয়া হয়নি। এরপরও রয়েল তার চাকরি স্থায়ীকরণের আশায় নিয়মিত ডিউটি করেন। সম্প্রতি ৩০ জানুয়ারি পৌর পরিষদ নির্বাচনের আগে নিয়োগ পরীক্ষার নামে আবারও ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়।

পরে তাকে চাপ দিয়ে বলা হয় তার আস্থাভাজন জগ প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আর তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

রয়েল, দুরুল হুদা, জাকারিয়া মাহমুদ উজ্জলসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০ ভুক্তভোগীরা বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি নৌকাপ্রার্থী আমির হোসেন আমিরের পক্ষে আমরা পৌরভার ১০ জন কাজ করি। এতে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। সম্প্রতি সাইদুর রহমান নির্বাচিত হয়ে আমাদেরকে পরিষদে আসতে নিষেধ করেন।

এদিকে ক্ষোভে অভিমানে অভুক্ত অবস্থায় আত্মহননের জন্য বিষপান করেন রয়েল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান রয়েলের পিতা আবু বাক্কার। তিনি বলেন, আমি পাড়ার এক মসজিদে মোয়াজ্জেম হিসেবে কাজ করি। বর্তমানে আমাকেও মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, রয়েল পাড়ার ছেলে বলে তাকে দিয়ে পরিষদের ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করানো হয়। পরে রোডলাইট ইলেকট্রিশিয়ান পদে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে তাকে ৯ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দেয়া হয়েছে। বর্তমান মেয়র এসে তাকে চাকরিচ্যুত করলে আমার কী করার আছে?

এ নিয়ে মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, পৌর পরিষদ থেকে কাউসার আলী রয়েল ছাড়াও ১০ জনকে নিয়োগ দেয়া আছে বলে আমার জানা নেই। তাই রয়েলকে পরিষদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে বলে এড়িয়ে যান মেয়র সাইদুর।

এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ দায়িত্বরত (তদন্ত) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন: