বিজয়

বিজয় এবং আমাদের রাজনীতি

ডিসেম্বর মানেই বাংলার বুকে বিজয়ের গন্ধ। ১৯৪৭ সালে মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের মানচিত্রে একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পাকিস্তান চিহ্নিত করা হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনে বাংলার বুকে গণতন্ত্রের পতাকা গেড়ে দেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আদর্শে বাংলাদেশ এখনো গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৫৮ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে সামরিক শাসন ছিল। বাংলাভাষীদের অধিকার আদায়ের জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম, অনেক আত্মত্যাগ, অনেক নির্যাতন সহ্য করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবশেষে বাংলার স্বাধীনতা দিয়েছেন, বাঙালীদের অধিকার দিয়েছেন। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তান নাম মাত্র গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু তাদের মূল ক্ষমতা, আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে সামরিক বাহিনীর ওপর। এতো বছর পরও পাকিস্তান স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়তায় সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করে বাঙালীর অর্থনৈতিক মুক্তির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলো।

১৯৮১ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা বুকের ভেতর কষ্টের পাথর বেঁধে পা রেখেছিলেন এই বাংলার মাটিতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে গণতান্ত্রিক ও শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এগিয়ে যান।

তিনি যদি তখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করতেন তাহলে এতদিনে দেশ পুরোপুরি পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী, বিশৃঙ্খল, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিনত হতো। শেখ হাসিনা সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন এবং বাংলার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে নতুন করে অভিসিক্ত করেছেন।

গণতন্ত্র রক্ষায় “ স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক”, ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা এবং প্রধান শক্তি ছিল তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সঙ্গে সহযোগী সংগঠনসমূহ।

২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে ইংল্যান্ডের হিথরো এয়ারপোর্ট তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে ফেরার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো। শেখ হাসিনা সেদিন যদি নিজের চিন্তা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহস এবং ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে না আসতেন তবে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুখ দেখতো কিনা দেশবাসীয় আশঙ্কার যথেষ্ট কারন আছে।

আজকের বাংলাদেশ গঠনের পিছনে সরকারের অবদানের কারণে বারবার সঙ্কটাপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আবহে, হাজার বছরের বাঙালী কৃষ্টি সংস্কৃতির অবগাহনে ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের প্রান। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বিস্ময়। বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল।

অপরদিকে পাকিস্তান ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর শাসনে পরিচালিত হয়। পাকিস্তানের বিচার বিভাগ সামরিক বাহিনীর আজ্ঞাবহ। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যায় এমন কোন রুল সেই দেশের সরকার জারি করে না। বরাবরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের সামরিক বাহিনীদের সিদ্ধান্তের সাথে আপোষ করে চলতে হয়। দেখা গেছে পারভেজ মোশাররফ তো সেনা বাহিনীর লোকই ছিলেন। এখন পাকিস্তানে সুশাসন নাই আইনের শাসনও লক্ষ্য করা যায়না। দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রধান নিয়োগ, পদোন্নতি, বাজেট তৈরী, অস্ত্র ক্রয় ইত্যাদী বিষয়ে সামরিক বাহিনীদের হস্তক্ষেপ বিদ্যমান।

সাবকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হতে যাচ্ছে। দেশ বিভাগের সময় তখন পাকিস্তানসহ অনেক দেশ মন্তব্য করেছিল বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে । অপরদিকে পাকিস্তানের নাম জঙ্গিবাদ ও নানান রাজনৈতিক ব্যর্থতার আলোচনায় বার বার বিশ্বের দরবারে উঠে আসে।

শেয়ার করুন: