রুমিন-তাবিথ-বিএনপি

রুমিন-তাবিথকে নিয়ে টালমাটাল বিএনপি

তরুণদের নিয়ে বিএনপি সাজানোর কাজ করছেন তারেক জিয়া। আর এজন্যই বয়স্ক বিএনপির প্রবীণ নেতাদের উপেক্ষা করে তিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তার প্রতি অনুগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। বিএনপির এমন অনেক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যে সিদ্ধান্তগুলো দলের প্রবীণ নেতারা জানছেন না। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই তারেক জিয়া এই প্রক্রিয়ায় দল চালাচ্ছেন। যেমন নির্বাচনের পর বিএনপি সংসদ সদস্যরা শপথ নিবেন এবং সংসদে যাবে এটি দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা জানতেন না। শুধু তারেকের নির্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটি করেছেন।

এখন বিএনপিতে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ নিয়ে তারেকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির পদ খালী রয়েছে। এই পদগুলোতে তারেক জিয়া অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং কর্মক্ষমদের দিতে চান। এজন্য তিনি দুজনের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সুত্রগুলো বলছে, গত শনিবার তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্থায়ী কমিটিতে দুজনকে অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। এদের মেধ্যে একজন হলেন মহিলা কোটায় সংসদ সদস্য রুমিন ফরহানা এবং আরেকজন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

এ দুজনের নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন যে, এরা জুনিয়র এবং স্থায়ী কমিটিতে যাওয়ার জন্য খুবই অনুপযুক্ত। তারেক জিয়া পাল্টা যুক্তি হিসেবে দেখান যে, বিএনপিকে তিনি দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য থেকে পুর্ণগঠিত করতে চাচ্ছেন। আজকের যে সম্স্ত নেতৃবৃন্দ আছেন তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয় অবসরে যাবেন না হয় কর্মক্ষম হয়ে পড়বেন। দলকে শক্তিশালী করার জন্য এই দুই তরুণকে তিনি অন্তর্ভুক্ত করতে চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, রুমিন ফারহানার সংসদে পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত তারেক বলেন যে, এরাই বিএনপির ফিউচার এবং এদেরকে দিয়েই দল তৈরি করতে হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বিষয়টিতে আপত্তি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দলে অনেক ত্যাগী পরিক্ষিত তরুণ রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন, কষ্ট স্বীকার করছেন। এখন যদি তাদেরকে বাদ দিয়ে এই দুজনকে দেওয়া হয় তাহলে দলের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যাবে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনুৎসাহিত হবে।

কিন্তু তারেক জিয়া তার মতামতের অনড় থাকেন এবং তিনি এটিকে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার কথা বলেন। এরপর বিএনপি মড়হাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়টি নিয়ে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা প্রত্যেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেছেন, এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তাদের জন্য বিএনপি করা কঠিন হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, আজ সকালেই বিএনপি মহাসচিব তাকে টেলিফোন করে এই দুজনের নাম বলেছেন এবং তাদেরকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা বলেছেন। বিএনপির ওই প্রবীণ নেতা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি হল দলের চেয়ারপারসনের পর সবচেয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি। এই কমিটি হলো বিএনপির জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সূচক পদ।

দীর্ঘদিন রাজনীতি করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। কাজেই আনকোরা নতুন এবং অনাহতদের স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হলে এটি দলের মধ্যে একটি নেতিবাচক বার্তা দেবে। তিনি বলেন, তারেক জিয়া এর আগেও রুমিন ফারহানাকে মহিলা কোটায় দিয়েছিলেন। অথচ দলের মধ্যে অনেক ত্যাগী-পরীক্ষিত ব্যক্তি নারী সদস্য থাকার পরেও রুমিন ফারহানাকে নিয়েও দলের ভিতর নানা রকম কর্থাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারেকের আবদার মানতে বাধ্য হন তারা। তাবিথ আউয়ালকেও ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থী করতে আপত্তি ছিল। এই সমস্ত আপত্তি সত্ত্বেও তারেক জিয়া শেষ পর্যন্ত এই দুজনকে গুরুত্বপূর্ণ করেছিল দলে।

এখন অনেক বিষয এই দুজন গুরুত্বপুর্ণ মতামত দেন এবং তারেক জিয়ার সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। আর এই কারণেই এদেরকে স্থায়ী কমিটিতে যদি শেষ পর্যন্ত আনা হয় তাহলে বিএনপিতে হতাশা তৈরি হবে বটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারেকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে কজন পারবেন সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

শেয়ার করুন: