মুক্তমত

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে মানসম্পন্ন বীজের ব্যবহার ও বঙ্গবন্ধুর দর্শন

শেখ মো. মুজাহিদ নোমানী খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে ক’টি উপকরণ একান্ত প্রয়োজন, তার মধ্যে বীজ হচ্ছে অন্যতম। বীজ হচ্ছে ফসলের প্রাণ। চিরন্তন সত্য হচ্ছে ‘ভালো বীজে ভালো ফসল’। ভালো বীজের গুণাগুণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভালো ফসল উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে ক’টি উপকরণ একান্ত প্রয়োজন, তার মধ্যে বীজ হচ্ছে অন্যতম। বীজ হচ্ছে ফসলের প্রাণ। চিরন্তন সত্য হচ্ছে ‘ভালো বীজে ভালো ফসল’। ভালো বীজের গুণাগুণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভালো ফসল উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

আর তাই ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝেছিলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাদ্যের সংস্থান করা অর্থাৎ দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা। আর অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন ভালো বীজ, সার ও সেচের।

বঙ্গবন্ধু হাতে নিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সোনার বাংলার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও পুরনো কৃষি অবকাঠামোগুলো পুনর্গঠন উন্নয়ন প্রকল্প। আর তাই ১৯৭৩-৭৮ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চালু করা হল ‘দানাশস্য বীজ প্রকল্প’ এবং বিএডিসিকে দায়িত্ব প্রদান করা হল ধান, পাট ও গম ফসলের বীজ উৎপাদনের জন্য।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড গঠনের পরপরই বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের ২২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করলেন তৎকালীন ‘বীজ অনুমোদন সংস্থা’ তথা আজকের ‘বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি’; যার অন্যতম প্রধান কাজ হল বিএডিসি কর্তৃক উৎপাদিত বীজের মাঠমান ও বীজমান যাচাই-পূর্বক প্রত্যয়ন দেয়া।

সাধারণ মানুষের ক্ষুধা নিবারণ ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার ইস্পাত দৃঢ় স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু লালন করেছেন, ধারণ করেছেন সব সময়। আর তাই তিনি বুঝেছিলেন, এ স্বপ্ন পূরণে প্রথমেই প্রয়োজন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের আছে উর্বর জমি, অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ আর আমাদের পরিশ্রমী মানুষ। আর তাই ভালো জাত উদ্ভাবন, মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করব।’

বঙ্গবন্ধু জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন, যে দেশের ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী, সে দেশের উন্নয়ন করতে হলে কৃষি, কৃষক আর কৃষিবিদদের মর্যাদা সমুন্নত করতে হবে। তাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে এসে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ঘোষণায় কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আরও বিশ্বাস করতেন- ‘কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমেই দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে পড়ে না থাকে এবং জমিতে ফসলের ফলন যাতে বৃদ্ধি পায়, তার জন্য দেশের কৃষক সমাজকেই সচেষ্ট হতে হবে’।

তাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার প্রথম সভায় বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে নিুলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন হয়- ১. দানাদার ফসল ও বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে জমিতে সেচ দেয়ার জন্য পূর্ব জার্মানি থেকে ৩৮,০০০ সেচযন্ত্র আমদানি করে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়। ৪০ হাজার শক্তিচালিত লো লিফট পাম্প, ২,৯০০টি গভীর নলকূপ ও ৩ হাজারটি অগভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। ২. ফিলিপাইন আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে আইআর-৮ জাতের উচ্চফলনশীল ধানের ১৬,১২৫ টন মানসম্পন্ন ধান বীজ আমদানি করা হয়। ৩. তাছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে ৪৫৪ টন পাট বীজ, ১১১ টন উফশী গম বীজ ও ১৭০০ মণ উফশী আলু বীজ আমদানি করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

৪. কৃষিতে কেবল বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিই নয়, বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্যই বরাদ্দ করেছিলেন ১০১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ২০ শতাংশের বেশি। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের বাস্তব শাসনামলে দেশের বাজেটের শতকরা ৩১ ভাগ অর্থ কৃষি খাতে ব্যয় করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাস্তব ও গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মাত্র দু’বছরের মধ্যে কৃষিতে সার্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৭ শতাংশ।

১৯৭১-৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলায় খাদ্য উৎপাদন ছিল মাত্র ৮৭.৫ লাখ টন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে এসে সংবর্ধনা সভায় প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলার মাটির মতো মাটি দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায় না, বাংলার সম্পদের মতো সম্পদ দুনিয়ায় পাওয়া যায় না।’ বঙ্গবন্ধু তার এক ভাষণে বলেছেন ‘বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা হবে না। নিরলস কাজ করে দেশে কৃষিবিপ্লব সাধন করুন’। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘পোকা মারার কোনো ওষুধের কারখানা আমার নাই। বিদেশ থেকে আনতে হয়। বীজ নাই, বীজ আনতে হয়। উইন্টার ক্রপ করতে পারলে কিছুটা উপকার হয়।

প্ল্যান্টওয়েতে আমাদের কাজ করতে হবে। তা যদি করতে পারি, তবে আমি আশা করি ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে।’ বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ১৩ ফ্রেরুয়ারি ১৯৭৩ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ভাষণে অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় বঙ্গবন্ধু তার নিজস্ব স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আরও বলেছিলেন, ‘খাদ্য বলতে শুধু চাল, আটা নয়; মাছ, মাংস, ডিম, তরিতরকারিও আছে। এসব কৃষি ও কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারছি না। চাল পাওয়া যায় না। যদি চাল খেতে হয় আপনাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে, না হলে মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও হবে না।’

১৯৭৪-৭৫ সালে বীজ অনুমোদন সংস্থা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্থাপনসহ বিএডিসি ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ফলে উন্নত জাতের মানসম্পন্ন প্রত্যায়িত বীজের উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৫-৭৬ সালে দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ২৩ লাখ টন, যা বঙ্গবন্ধু নিজ চোখে দেখে যেতে পারেননি। কারণ কিছু দুর্বৃত্ত সেনা অফিসারদের নৃশংসতায় শাহাদতবরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বীজমান উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণের পথিকৃৎ আমাদের জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে ‘দানাশস্য বীজ প্রকল্প’-এর আওতায় বীজপ্রযুক্তি ও বীজমান নিশ্চিতকরণে বিএডিসি ও তৎকালীন বীজ অনুমোদন সংস্থার তদারকিতে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ফলে ১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে এ কার্যক্রমের আওতায় ১৯৭৬-৭৭ সালে ৫৭৬ টন মানসম্পন্ন গমবীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়। মাত্র এক বছর পরই ১৯৭৭-৭৮ সালে ধান, পাট ও সবজিসহ মোট বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৫,০৬৬ টনে উন্নীত হয়, যা ছিল মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সঠিক সময়ে চাষী পর্যায়ে ভালো বীজ সরবরাহে বঙ্গবন্ধুর অসীম দূরদর্শিতার সফল পদক্ষেপ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেও এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় সম্মিলিতভাবে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ফলে, যা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২০-এর প্রতিপাদ্যকে শতভাগ সঠিক প্রমাণ করেছে।

বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী দিকনির্দেশনা ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথ ভিত্তি স্থাপন করার ফলেই দেশে আজ ধান, পাট, গম ও আলু ফসলের প্রত্যয়নকৃত বীজ উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৭-১৮ বর্ষে দাঁড়িয়েছে ৮০,৯৫৪ টনের বেশি। বিএডিসি ও বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদিত হয়েছে ৭০,৬২৭ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ বর্ষে ১,০৫,১০৯ টন দানাশস্য বীজ, ৩১,২৪৬ টন বীজ আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ১,৩৯,৫৮১ টন বীজ উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়, যা ফসল উৎপাদন অনুযায়ী ৫০-৭০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশে আজ ভালো বীজের কোনো সংকট নেই।

বর্তমানে ভুট্টা বীজ, পাট বীজ, কিছু হাইব্রিড ধান ও সবজি বীজ ছাড়া ঢালাওভাবে আর বীজ আমদানি করতে হয় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার টন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে গম উৎপাদন হয়েছে ১৩,১১,৪৭৩ টন। ভুট্টা ৩০,২৫,৮১১ টন। বঙ্গবন্ধুর সেই দৃঢ়চেতা দিক-নির্দেশনা আর কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদ যোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধান চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বর্তমানে দেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত ও খাদ্য রফতানিকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণ-পরবর্তী বাংলাদেশে বীজ সংকটের ইতিহাস (১৯৭৫-১৯৯৬): কৃষি ও বীজের ক্ষেত্রে এর পরের ইতিহাস করুণ ও নির্মমতায় ভরা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের পর থেকে কমপক্ষে ২১ বছর সামরিক শাসকরা দেশ পরিচালনাকালে বীজ মান নিশ্চিতকরণে ছিল না কোনো উন্নয়ন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পৃক্ততা।

ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে থেকে অনেক কষ্ট করে এক ব্যাগ বীজ আর ২-১ ব্যাগ সারের জন্য কৃষককে যেতে হয়েছে এক বাজার থেকে অন্য বাজারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে এক ব্যাগ বীজ ও সার। পরিমাণমতো বীজ ও সার না পেয়ে এবং সেচ দিতে না পেরে ফসল পায়নি কৃষক। ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানি করতে হয়েছে প্রচুর ধান, পাট, গম, আর আলু ও সবজি ফসলের বীজগুলো। এতে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশের খাদ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ৩০-৪০ লাখ টনে।

বীজমান উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানঃ ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি, বীজ প্রত্যয়নের সৃষ্টি’ যেমন সে সময়ে সঠিক ও যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৫ বছরের কৃতিত্বপূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনা বীজমান উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন হয়েছে।

বাংলাদেশের বীজ সেক্টর আজ সুসংহত ও বিকশিত হতে পেরেছে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ’- এ দর্শনে নেতৃত্ব প্রদানের ফলে; যা এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২০-এর প্রতিপাদ্যের সঙ্গে শতভাগ সাজুয্যপূর্ণ ছিল।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীজ উৎপাদনে সম্পৃক্তকরণঃ বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের ২১ বছর পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশের বীজ সেক্টরেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৯৯৭ সাল থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীজ উৎপাদন, সম্প্রসারণ ও বীজ শিল্প উন্নয়ন খাতে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে বাংলাদেশে বীজ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রত্যয়ন ও বাজারজাতকরণে শুরু হয় ব্যাপক কর্মকাণ্ড।

এরই ফলে বিএডিসি, ডিএইসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আজ প্রায় ১৫০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দানাদার ফসলের বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিয়োজিত আছে। বীজ সরবরাহের দিকে তাকালে করলে দেখা যায়- বেসরকারি খাত মূলত উচ্চ মুনাফার বীজ যেমন হাইব্রিড ধান বীজ (৯২.৪২ শতাংশ), ভুট্টা (৯৮,৮৫ শতাংশ); পাট (৯৫.৩৭ শতাংশ), শাকসবজি (৯৬.২১ শতাংশ) এবং আলু (৭২.২৬ শতাংশ) বীজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যা বর্ণিত ফসলের বা খাদ্যের ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার দর্শন, মানসম্পন্ন বীজের উন্নয়ন’ এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমরা ইতোমধ্যে ফসল উৎপাদনে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ হয়েছি। কৃষি উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি মানসম্পন্ন ভালো বীজ ব্যবহার করা হয়, তাহলে ‘ভালো বীজ হতে পাব অধিক ফসল, দেশ ও জাতি হবে সুস্থ সবল।’ চলতি ১০১৮-১৯ বর্ষে বাংলাদেশে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডি) পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৯-২০ মৌসুমে ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এতে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে বিশ্বের ৩য় শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশ থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশ (দৈনিক ইত্তে ফাক, ১৬ মে, ২০২০)।

যা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও মুজিববর্ষের এ মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত করে ২০৪১ রূপকল্পের মাধ্যমে ‘সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা উন্নত এক বাংলাদেশ’ হওয়ার পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক ‘মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করব, অধিক ফসল ঘরে তুলব।’ এভাবেই আমরা পাব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’ আর দেশ হয়ে উঠবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ‘সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা উন্নত এক বাংলাদেশ।’

কৃষিবিদ শেখ মো. মুজাহিদ নোমানী: ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক-১৪২৩’ প্রাপ্ত কৃষি সাংবাদিক, উদ্ভাবক ও (অবসরপ্রাপ্ত) উপপরিচালক ও জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার, এসসিএ (কৃষি মন্ত্রণালয়)

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৬ নভেম্বর ২০২০, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

নোংরা শৌচাগার থেকে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ

মূত্রাশয় বা মূত্রথলিতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ প্রদাহ ও অস্বস্তি বাড়ায়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন…

২৬ মার্চ ২০২৪, ১:০২ অপরাহ্ণ