চাকরি

চাকরি যদি চলে যায়!

করোনার প্রভাব পড়েছে চাকরির বাজারেও। প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার সংকুচিত হওয়ায় লোকসান বাড়ছে। ফলে চাকরি হারাচ্ছেন কিংবা হারানোর ঝুঁকিতে আছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে চাকুরীজীবীদের কী করণীয়? এসএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার অ্যান্ড এইচ আর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন উত্তম রয়ের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন আল সানি

যেকোনো জায়গায় কাজের মানসিকতা রাখুন: চাকরির কর্মস্থল যদি আপনার বর্তমান অবস্থানের জায়গা থেকে দূরবর্তী কোথাও হয়, তবু পিছপা হবেন না, যদি না বড় কোনো আশঙ্কা থাকে! কারণ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চাকরি পাওয়াটা সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই! আবার অনেককেই দেখা যায় ঢাকা বা সিটি করপোরেশনের বাইরে বদলি করলে চাকরি ছেড়ে দেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ রকম কথা চিন্তাও করবেন না। কারণ এই বাজারে একটি চাকরি চলে গেলে সেই মূল্যমানের আরেকটি চাকরি জোগাড় করা খুব দুরূহ ব্যাপার! বর্তমান পরিস্থিতিতেও এনজিওগুলোয় জনবল নিয়োগ হচ্ছে। তবে তাদের বেশির ভাগ কাজই মাঠ পর্যায়ের। তাই আগ্রহী প্রার্থীরা মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে পারেন।

পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলুন: চাকরি চলে গেছে বলে লজ্জায় কারো কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে যাবেন না! এ রকম পরিস্থিতি সব চাকরিজীবীর ক্ষেত্রেই হতে পারে! পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীদের মধ্যে যাঁরা সহযোগিতার মানসিকতা রাখেন, তাঁদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। তাঁদের যুক্তি-পরামর্শ শুনুন, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করুন, নতুন কিছু করার ইচ্ছা থাকলে তার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে সমাধানের পথে এগোতে থাকুন। আপনার সহকর্মী বা বন্ধুরা, যাঁরা বিভিন্ন কর্মস্থলে আছেন, তাঁদের পরামর্শ নিতে পারেন। তাঁদের জানাশোনা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ আছে কি না—খোঁজ করুন। তাঁরা কতটা সাহায্য করতে পারবেন জানার চেষ্টা করুন, আর তা অবশ্যই ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতা বজায় রেখে।

বিকল্প চিন্তায় সহজেই মুক্তি: চাকরির বিকল্প নিয়েও ভাবতে পারেন। কারণ এক চাকরি হারিয়ে নতুন আরেক চাকরি নেবেন, সেখানেও যে করোনাসৃষ্ট মন্দা পরিস্থিতির প্রভাব পড়বে না, তা তো নিশ্চিত করে বলা যায় না! আবার যাঁদের চাকরি আছে কিন্তু সেটা স্থিতিশীল বা সন্তোষজনক না, তাঁরাও বিকল্প চিন্তা করতে পারেন। নিজের অবস্থা-গণ্ডি বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের নাম লেখাতে পারেন। অনেকেই খণ্ডকালীন কাজ, http://fiverr.com ও http://upwork.com-এ ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স বা অনলাইন বিজনেস করে ভালোই আয়-রোজগার করছেন।

সিভি বানাতে হবে সময়োপযোগী: সিভি বা বায়োডাটা হলো চাকরিক্ষেত্রে নিজেকে তুলে ধরার প্রাথমিক মাধ্যম। সমৃদ্ধ সিভিধারীরাই চাকরি পাওয়ার প্রাথমিক ধাপে এগিয়ে থাকেন। প্রার্থীদের এর ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করে শর্ট লিস্ট বা প্রাথমিক তালিকা করেন নিয়োগকর্তারা। তাই বায়োডাটায় নতুনত্ব আনুন। এখন অনলাইনেই আধুনিক-স্মার্ট সিভির নমুনা পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে নিয়ে নিজের মতো করে পরিবর্তন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদেরও পরামর্শ নিতে পারেন। সিভিতে আপনার পুরনো কর্মস্থলের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরুন। রেফারেন্স হিসেবে সাবেক কর্মস্থলের সিনিয়র কারোর (যিনি আপনার ব্যাপারে খুব ভালোভাবে জানেন) নাম ব্যবহার করতে পারলে খুব ভালো হয়।

চাকরির ধরন অনুযায়ী একাধিক ফরম্যাটের সিভি বানিয়ে রাখতে পারেন। সিভির পর্যাপ্ত হার্ড কপি বা প্রিন্ট কপিও প্রস্তুত করে রাখুন। হঠাৎ ডাক পড়ে গেলে যেন করোনা পরিস্থিতিতে কম্পিউটারের দোকান খুঁজতে গিয়ে অহেতুক পেরেশানিতে পড়তে না হয়। যাঁদের চাকরি আছে কিন্তু স্থিতিশীল না, তাঁরাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে রাখতে পারেন।

সিভির নমুনা ও পরামর্শ দেখুন এই দুই লিংকে—
http://www.bdjobs.com/career/example1.asp

http://www.bdjobs.com/career/resumebangla.asp

সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হতে ভুলবেন না: করোনায় নতুন চাকরির বাজার এখন অনেকটাই সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব মাধ্যমে সক্রিয় না থাকলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন।

অনেক নিয়োগপ্রক্রিয়ার খবরাখবর, হালনাগাদ তথ্য কিংবা মৌখিক পরীক্ষার তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে লিংকডইন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সক্রিয় হতে হবে।

ফেসবুকভিত্তিক চাকরিসংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতেও (যেমন—BCS Preliminary Campaigner, Bankers Selection Guide-BSG, BCS : Our Goal) নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও তথ্য প্রকাশিত হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন তাদের ফেসবুক বা সোশ্যাল পেজ ও ওয়েবসাইট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

এসব মাধ্যমে তাদের বর্তমান কার্যক্রম, পণ্য বা সেবা সংশ্লিষ্ট তথ্যের হালনাগাদের পাশাপাশি বেসিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন। এ ছাড়া নিয়মিত বিডিজবস, এনআরবিজবসসহ অন্যান্য চাকরির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলোতে চাওয়া যোগ্যতা দেখে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে পারেন। পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো খেয়াল করে পড়তে ভুলবেন না। চাকরির পরীক্ষায় সাম্প্রতিক বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন থাকে।

অবসরকে কাজে লাগান: করোনার কারণে যাঁদের চাকরি নেই, তাঁরা সময়টা পুরোপুরি কাজে লাগান। নতুন চাকরির খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করুন। নিজের দুর্বলতা ও ঘাটতি খুঁজে বের করে নিজেই করণীয় ঠিক করুন। পেশা বদল করতে চাইলে এ সময়ে চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনায় ব্যয় করুন। কিছু সেলফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে নিতে পারেন।

অনলাইনেও এ সম্পর্কিত বহু রিসোর্স পাবেন। কম্পিউটার বা অনলাইন সংশ্লিষ্ট কাজের পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে পারেন। ফ্রিলান্সিং কোনো কাজের সুযোগ পেলে হাতছাড়া করবেন না। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে কোর্স চালু রেখেছে।

অর্থ ব্যবস্থাপনা:
অনেক সময় নতুন চাকরি পেতে একটু সময় লাগতে পারে। সুতরাং আপনার হাতে যে পরিমাণ অর্থ আছে তার একটি বাজেট বানিয়ে ফেলুন। বাজেট অনুযায়ী কত দিন এই টাকা দিয়ে চলতে পারবেন, তার হিসাব করে রাখতে পারেন।

পরিবারে ব্যয়সংকোচন নীতি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদা ও প্রয়োজনের পার্থক্য বুঝে জমানো অর্থ খরচ করতে হবে। বর্তমানে যাঁরা চাকরিরত আছেন, এটা তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য।

মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন:
চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেকেরই আত্মবিশ্বাস তলানীতে গিয়ে ঠেকে! অথচ এটা আজকাল খুব স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চাকরি চলে যাওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়! তাই মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে। সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটান।

শেয়ার করুন: