২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলোতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। দলটির চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আট সাংগঠনিক সম্পাদকের কেউ পদোন্নতি পেতে পারেন, আবার কেউ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। দলটির সভাপতিমণ্ডলীতেও বড় পরিবর্তন আসতে পারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী সম্মেলন ও তার পরের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবীণ নেতাদের চেয়ে নবীন নেতাদের আধিক্য আনবেন। তিনি তারুণ্যনির্ভর দল গঠন করতে চাইছেন। ফলে আগামী কমিটিতে প্রবীণ অনেক নেতাকেই নবীনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা কেন্দ্রীয় পদ পেয়েও কাঙ্ক্ষিত কাজ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন—এমন নেতাও বাদ পড়বেন। এসব পদে তরুণ মেধাবী নেতা ও কয়েক প্রজন্ম ধরে আওয়ামী লীগ করেছেন—এমন পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যা বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পরিবর্তন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চান শেখ হাসিনা আবারও সভাপতি হোন। ফলে তিনিই থাকবেন দলের সভাপতি। কিন্তু অন্য সব পদেই পরিবর্তন আসতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রীর যা মনোভাব বুঝতে পারি, তাতে মনে হচ্ছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবার পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নেতাদের বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই বাদ দিয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখেও অনেকের কাছেই শুনছি যে কমিটিতে বড় পরিবর্তন আসবে। প্রবীণদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। আর নবীনের সংখ্যা বেশি আসবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও কমিটিতে পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করি। এখন পর্যন্ত যত সম্মেলন হয়েছে প্রতিটি সম্মেলনেই নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি হয়েছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে আমি মনে করি না। যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, দলের মধ্যে জনপ্রিয়, যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা পালনে যারা সক্ষম—এমন লোকদের মধ্যে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব বিবেচনায় নিয়েই নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি দেখছেন। আমাদের সবার তাঁর ওপর আস্থা আছে যে তিনি সব কিছু বিবেচনা করেই কমিটি করবেন।’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘কিছু পরিবর্তন হবে এবং কিছু রিপিট হবে।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কম রাখার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দু-চারজন ছাড়া মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে না। সভাপতিমণ্ডলী থেকে নিষ্ক্রিয় প্রবীণ নেতাদের অনেককেই বাদ দেওয়া হবে। চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্য থেকে একাধিক নেতাকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হতে পারে। আট সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্য থেকে একাধিক নেতার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। টানা তিন মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য সদস্যদের মধ্যে থেকে একাধিক নেতার পদোন্নতি পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের বিশেষ সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্য থেকে একাধিক নেতাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মের ভবিষ্যৎরাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার আগেই তারুণ্যনির্ভর একটি দল গঠন করতে চান। ফলে আগামী দুই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবীণের চেয়ে নবীনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। গত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকজন তরুণ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে যাঁরা ভালো কাজ দেখাতে পারেননি তাঁদের এবার বাদ দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’ এবারের জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নতুন কোনো সদস্যের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘এখনো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত দেননি।’