বন্দরগুলো

দেশের বন্দরগুলোর অর্ধেক পদই শূন্য

দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে। এসব বন্দরের অনুমোদিত পদের তুলনায় অর্ধেক লোক কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের আট হাজার ৬৮০টি অনুমোদিত পদের মধ্যে এক হাজার ৫১২টি পদ শূন্য আছে। মোংলায় দুই হাজার ৭২৭ জন অনুমোদিত জনবলের মধ্যে কর্মরত আছে এক হাজার ৩৬ জন। আর পায়রা বন্দরের অনুমোদিত ২৩৬ জন জনবলের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৯২ জনকে।

সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ১১তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। বৈঠকে বন্দর তিনটির কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শাজাহান খান, মো. মাজহারুল হক প্রধান, রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, আছলাম হোসেন সওদাগর ও এস এম শাহজাদা উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির আহ্বানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ফিন্যান্স) কমিটির বিগত প্রথম থেকে দশম বৈঠক পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনটি কমিটিকে পাঠ করে শোনান।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আট হাজার ৬৮০টি অনুমোদিত পদের মধ্যে এক হাজার ৫১২টি পদ শূন্য আছে। এর মধ্য থেকে আগামী বছর নাগাদ ২৮৬টি পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দরের চলমান প্রকল্পসমূহ কমিটি কর্তৃক সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যাপারে কমিটি যখন পরিদর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করবে, তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, কমিটির সদস্য কর্তৃক বিদেশের বিভিন্ন নৌবন্দর সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যাপারে কোন কোন বন্দর পরিদর্শন হবে তার তালিকাসহ কমিটির সদস্যসহ সহায়ক কর্মকর্তাদের তালিকা পেলে পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত আছে। তাছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুজিববর্ষ পালনের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি আছে বলেও জানান তিনি।

কমিটির সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্যারিফ ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৮৭ সালের নির্ধারিত ট্যারিফ এখনও চলছে। বন্দরের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে যতদ্রুত সম্ভব তিনি এই ট্যারিফ বাড়ানোর ওপরে গুরুত্বারোপ করেন। বে-টার্মিনাল এবং পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কমিটিকে অবহিত করে তিনি। চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদন সক্ষমতা কতটুকু বাড়ানো সম্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে কমিটির ধারণা লাভের জন্য তার বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদন আকারে কমিটিতে উ্পস্থাপনের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি পতেঙ্গা টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।

কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বৃহৎ সংস্থা। এর আলোচনা এভাবে হালকা, বিক্ষিপ্ত আকারে করা ঠিক হচ্ছে না। আলোচনা এবং বোঝার সুবিধার্থে তিনি বিভিন্ন দফতর/সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কমিটি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ এবং এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে পরবর্তীতে আলাদাভাবে উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে চলছে কি-না, সে সম্পর্কে ইদানীংকালে কোনো স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দরের জেটিগুলো কারা হ্যান্ডেল করছে, এগুলো সঠিকভাবে হ্যান্ডেল হচ্ছে কি না, ট্যারিফ কেন বাড়ছে না, বন্দরে নতুন কী কাজ হচ্ছে এবং এসব কাজের ঠিকাদার কারা তা কমিটির জানা নেই। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় যেভাবে বাজেট, লংটার্ম প্ল্যান ও পঞ্চবার্ষিকী প্ল্যান পাস হয়েছে তার বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করার পরামর্শ দেন তিনি।

এরপর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমিটির বিগত প্রথম থেকে দশম বৈঠক পর্যন্ত মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনটি কমিটিকে পাঠ করে শোনান।

তিনি বলেন, দুই হাজার ৭২৭ জন অনুমোদিত জনবলের মধ্যে কর্মরত আছে এক হাজার ৩৬ জন। অবশিষ্ট পদগুলো পূরণের কার্যক্রম চলমান আছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমিটির বিগত প্রথম থেকে দশম বৈঠক পর্যন্ত পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনটি কমিটিকে পাঠ করে শোনান।

বন্দরের অনুমোদিত ২৩৬ জন জনবলের মধ্যে ১৯২ জন নিয়োগ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট জনবলে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন: