যানচলাচল

রাজধানীতে স্বাভাবিক হয়েছে যানচলাচল

নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ স্থগিত ও সংশোধনের দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল শ্রমিকরা। তবে শ্রমিক সংগঠন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই দফা বৈঠকে বেশ কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস ও ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন আইন প্রয়োগে শিথিলতা প্রদর্শন করবে পুলিশ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর স্বরূপে ফিরেছে ঢাকা। আশ্বাস পেয়ে কর্মে ফিরেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। স্বাভাবিক হয়েছে রাজধানীতে যানচলাচল।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর ও প্রয়োগ শুরু হলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ কয়েকটি বিষয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত শিথিলতা প্রদর্শন করবে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমন নির্দেশনা এবং আইনের কয়েকটি ধারার বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এরপর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো আন্দোলনে না যাবে শ্রমিকরা। আজ রোববার সকাল থেকে এর প্রতিফলনও লক্ষ্য করা গেছে।

রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলাচল করছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন। চলছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানও। কর্মজীবীরা ছুটছেন কর্মস্থলে, সাধারণ যাত্রীরা ছুটছেন গন্তব্যে।

গাবতলীতে আসছে সব জেলার যাত্রীবাহী বাস। আন্তঃজেলার যাত্রীবাহী বাসও ঢুকছে রাজধানীতে। বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছুটির দিনে যানবাহন চলাচল ও যানজট না থাকলেও আজ ভিন্নচিত্র। দূরপাল্লার বাস চলছে, চলছে আন্তঃজেলা ও রাজধানীতে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন। অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ডেকে পরদিনই স্থগিত করায় পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানও চলছে।

ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শ্রমিকরা কর্মে ফিরেছে। সকাল থেকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে।’

এ বিষয়ে কথা হলে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার দাস বলেন, ‘সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। স্বাভাবিক দিনের মতো চাপ সামলাতে ট্রাফিক বিভাগের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে।’

ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের রমনা এলাকার সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে আজ ভিন্ন চিত্র। যানচলাচল অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের একজন এডিসি নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।

গত রাতে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এরপর থেকে আইন প্রয়োগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কিছু ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সড়ক পরিহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। মালিক-শ্রমিকরা আমাদের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা কিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী আইনের কিছু ধারা সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এসব বিষয় নিয়ে আমরা শাজাহান খানের নেতৃত্বে পরিবহন নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে যে যেভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা সেভাবেই চালাবেন। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তারা লাইসেন্স হালনাগাদ বা উপযুক্ত লাইসেন্স সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তবে কারও কাছে ভুয়া লাইসেন্স পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হবে। তারা নতুন করে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স করে নেবেন।’

এ ক্ষেত্রে লাইট, মিডিয়াম, হেভি (ভারী) লাইসেন্স বিবেচনায় উপযুক্ত লাইসেন্স করে নিতে এবং যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা নবায়ন করতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবেন বলে উল্লখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

শাজাহান খান বলেন, আইন হওয়ার সময় থেকেই কিছু কিছু বিষয় সংশোধনের দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই আইনের বিরোধিতা করিনি। আমরা আইন মানি এবং মানব। কিন্তু আইনে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, সেগুলো দূর করে সঙ্গতিপূর্ণ করার দাবি আমরা জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে দাবি সেগুলো যদি ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত মনে করেন, তাহলে ব্যবস্থা নেবেন। আর ন্যায়সঙ্গত মনে না করলে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন, আমরা মেনে নেব।’

আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। ধর্মঘট-আন্দোলন আমাদের পেশা নয় বলেও মন্তব্য করেন শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘বিপদ হলে আমরা কথা বলি, না শুনলে আন্দোলনে যেতে হয়। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তখন আমরা কর্মসূচি দেব।’

শেয়ার করুন: