তাজরীন

তাজরীন ট্রাজেডি: এখনো আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের

সাভারের আশুলিয়ার জন্য একটি বিভীষিকাময় দিন ২৪ নভেম্বর। ২০১২ সালের এই দিনে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আকাশ ভারী হয়েছিলো তাজরীনের শ্রমিকদের আর্তনাদে। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়েছিলো পুরো এলাকা। আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছিলো ওই এলাকার মানুষের চোখে মুখে। তাজরীন দুর্ঘটনার ৬ বছর শেষ হয়ে আজ ৭ বছর, কিন্তু এখনো আতঙ্ক কাটেনি ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়দের।

এখনো তাজরীনের জরাজীর্ণ ভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেও আতকে ওঠেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা ভবনটিকে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। আর এই ঝুঁকি ও আতঙ্ক থেকে বাঁচতে ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত অথবা ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তারা।

আতঙ্ক নিয়ে তাজরীনের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া আতাউর রহমানের (৬২) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সেই দিনের কথা আজও ভুলতে পারি নাই। শ্রমিকদের আর্তনাদ, তাদের কান্নার রোল এখনো ভেসে আসে চোখে। এই ভবনের নিচ দিয়ে যেতে এখনো গা শিউরে ওঠে। তিনি বলেন, এই ভবন যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। আর কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এই ভবনটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার দুই সন্তান এই দুর্ঘটনায় আহত কিন্তু কোন দিন কারো কাছে কোন দাবি জানাই নি। কাউকে কিছু বলিনি, তবে আজ বলছি এই অভিশাপকে (ভবনকে) ভেঙে এই এলাকার মানুষদের আতঙ্ক মুক্ত করুন।

আতাউর রহমানের ২ ছেলে জাহাঙ্গীর (৩০) ও জাহিদুল (২৫)। তারা দুজনই এই কারখানায় কাজ করতো। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি তিন তলায় কাজ করতাম। যখন আগুন লাগে তার কিছুক্ষণ পরে আমি গ্রিল ভেঙে বাঁশ বেয়ে নিচে নেমে আসি। সেই দিনের চিৎকার আর ভয়াবহতা আজো ভুলিনি।

জাহিদুল (২৫) জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই , তিনি কাজ করতেন তাজরীনের ৪ তলায়। তিনি আগুনের ভয়াবহতা দেখে ভবনটির ৪ তলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বাঁচতে চেয়েছেন। ভাগ্যের জোরে তিনি ভবনটির পাশের টিন শেডের একটি চালায় পড়লে টিন ভেঙে খাটের ওপর পড়েন। এ যাত্রায়ও তিনি বেঁচে ফেরেন। বাবার মত তারও দাবি ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণকারী ‘বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের’ সহ-সম্পাদক সারোয়ার সেই দিনের কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তাও আবার আগুনে পুড়ে, কয়লা হয়েছেন কেউ, চারদিকে চিৎকার আর কান্নার রোল এমন দৃশ্য যারা দেখেছেন, এমন কেউ ওই ভবনের কাছে গেলে আতকে উঠবেই। শত মানুষের প্রাণ খেকো নিদর্শন ভেঙে তাজরীনের আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন বা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল ও হাসপাতাল করে দেওয়ার জন্য জোড় দাবি জানাই।

জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক (আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি) লায়ন মোহাম্মদ ঈমাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমি নিজেও একমত সেখানে একটি শহীদ বেদী তৈরি করা হোক। জরাজীর্ণ তাজরীনের ভবনটি পরীক্ষা করে সেটি যদি ঠিক থাকে তাহলে সেখানে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন বা নতুন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আহত শ্রমিকদের বা নিহতের পরিবারের সদস্যদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।

শেয়ার করুন: