banasree

বৃষ্টি আর কাদা পানিতে বনশ্রীজুড়ে চরম ভোগান্তি

প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে রাজধানীতে ঝরছে বৃষ্টি। এ অবস্থায়ও চলছে বনশ্রী এলাকায় সড়কের ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণকাজ। ফলে বনশ্রীর প্রায় প্রতিটি রাস্তা খানাখন্দে ভরে গেছে। বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টিতে উন্নয়নের ভোগান্তি এবং কাদা পানিতে একাকার বনশ্রী।

বড় সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই চলছে ড্রেন নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি বড় সড়কের পাশে চলছে ফুটপাত নির্মাণ। রাস্তার দুই পাশ কাটায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অধিকাংশ রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে যেন জলাবদ্ধতা না হয় এবং অতিরিক্ত চাপেও যেন পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক থাকে সে লক্ষ্যে তুলনামূলক চিকন পাইপের পরিবর্তে মোটা ব্যসের পাইপ বসানো হচ্ছে এই এলাকায়।

রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সাধারণ পথচারীদের হাঁটাচলাসহ যানচলাচলে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনার। এলাকাজুড়ে কাদা পানিতে একাকার। সৃষ্টি হয়েছে অতিমাত্রায় ভোগান্তির।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তাণ্ডব চলতে পারে। সারাদেশেই এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে এবং ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।

বনশ্রী বি ব্লকের সড়কের পাশেই কথা হয় রিকশাচালক আব্দুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ প্রায় দুই মাস ধরে বনশ্রী এলাকায় ড্রেন এবং ফুটপাত নির্মাণের জন্য রাস্তা খুঁড়ে রেখেছে। যে কারণে গলিতে রিকশা চালানো যাচ্ছে না। আজ আবার বৃষ্টির কারণে কাদা কাদা হয়ে গেছে পুরো বনশ্রী। রিকশাসহ সাধারণ মানুষের হেঁটে চলতেও কষ্ট হচ্ছে। এ উন্নয়নের কাজ কতদিন চলবে কে জানে?

বি ব্লকের রাস্তাসংলগ্ন একটি বাসার ভাড়াটিয়া হাবিবুল্লাহ বলেন, পানি নিষ্কাশনের গতি বাড়ানোর জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বড় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক দিন ধরে এ কাজ চলছে যে কারণে এলাকাবাসীর খুবই ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সব রাস্তা একসঙ্গে কাটা হয়েছে। আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এ কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর হবে না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, এক হাজার ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্পোরেশনের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্প চলমান, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ২০৬ কি.মি. রাস্তা, ২৮৮ কি.মি. নর্দমা ও ১৪৪ কি.মি. ফুটপাত নির্মাণ এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও ২০ দশমিক ৪২ কি.মি. রাস্তা, ৩০ কি.মি. নর্দমা ও ৬৩ দশমিক ৪৬ কি.মি. ফুটপাত নির্মাণ এবং উন্নয়নের কাজ চলমান।

বনশ্রী সি ব্লকের একটি দোকানের মালিক মোহাম্মদ আকাশ বলেন, বড় রাস্তার দুই পাশে দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে আমাদের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ দোকানে ঢোকার সামনের রাস্তা কাটার ফলে ক্রেতারা দোকানে আসতে পারছেন না। আমরা ক্রেতা আসার সুবিধার্থে কাঠের সাঁকোর মতো করে দিয়েছি। তবুও তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না সারাদিনে। সিটি কর্পোরেশনের উচিত তাড়িতাড়ি কাজ শেষ করা। এত দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য পথচারী-এলাকাবাসী-ব্যবসায়ী সবাই খুবই বিরক্ত।

সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বড় সড়কের পাশে গলির ছোট সড়কে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার দুই পাশে ভুলে কেটে এখন আবার তারা মাঝখান দিয়ে কাটছে ড্রেন বসানোর জন্য। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাজের মেয়াদ। কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

এ বিষয়ে সেখানে কাজ করা শ্রমিকদের সমন্বয়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, ভেতরের গলি সড়কের দু-একটাতে প্রথমে দুই পাশে কাটা হয়েছিল ফুটপাত নির্মাণকাজের জন্য। কিন্তু যখন দেখা গেল এসব সরুগলির সড়কে ফুটপাত বসালে দুটা গাড়ি দুদিক থেকে ক্রস করতে পারবে না। যে কারণে এই ছোট সড়কগুলোতে আর ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে না। তবে কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে। আসলে এলাকাবাসীর সুবিধার্থে আর পানি নিষ্কাশন পদ্ধতির গতি বাড়াতে বড় করে ড্রেন বসানো হচ্ছে যে কারণে সময়ও একটু বেশি লাগছে।

এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসির এমন উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন, ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প চলমান, যা ২০২১ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। ফলে প্রকল্প এলাকায় পথচারীদের চলাচল সুগম করাসহ যানজট হ্রাস

শেয়ার করুন: