চলচ্চিত্র পুরস্কার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : সম্মাননা পাচ্ছেন চার তারকা

বাংলাদেশের অভিনয়ের আঙ্গিনায় শক্তিমান এক অভিনেতার নাম এটিএমন শামসুজ্জামান। সেই ষাট দশক থেকেই চলচ্চিত্রে তার সফল পদচারণা। যেমন খল চরিত্রে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা তেমনি রসালো সংলাপ আর হাস্যোজ্জ্বল অভিনয়েও তিনি অনন্য। বার্ধক্যের কারণে অনেকদিন অভিনয়ে নেই তিনি। তাকে মিস করে বাংলার দর্শক। সেইসঙ্গে বাংলার রঙিন নবাব খ্যাত অভিনেতা প্রবীর মিত্রও রয়েছেন অভিনয় থেকে দূরে। বার্ধ্যকজনিত অসুখে ভুগছেন তিনিও। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জৌলুস রেখে নিরবে নিভৃতেই এখন জীবন কাটে তার।

অন্যদিকে নিরবে নিভৃতে জীবন কাটানো আরেক রঙিন মানুষ সুজাতা। ১৯৬৫ সালের রূপবান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের করে দর্শকের মন জয় করেছিলেন তিনি। ষাট দশক থেকেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে আসছেন ঢাকাই সিনেমায়। তবে অনেকদিন ধরেই অভিনয় থেকে বাইরে তিনি। চলচ্চিত্র বিষয়ক কিছু অনুষ্ঠানে হঠাৎ দেখা মেলে তার। বাংলা চলচ্চিত্রের বর্ষিয়ান এই তিন গুণীজনকে এবার আজীবন সম্মাননা দিতে যাচ্ছে সরকার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাবেন এই তিন তারকা।

তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে । সেখান থেকে জানা গেল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নতুন বিজয়ীদের নাম। আজীবন সম্মাননার তালিকায় ২০১৭ সালে রয়েছে এটিএম শামসুজ্জামান সুচন্দার নাম। ২০১৮ সালের জন্য আজীবন সম্মাননা পাবেন প্রবীর মিত্র। তার সঙ্গে যৌথভাবে এই সম্মাননা নেবেন চিত্রনায়ক আলমগীরও। আগামী বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুণীজনদের হাতে আজীবন সম্মাননা তুলে দেবেন।

এদিকে দুই বছরের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণায় ২০১৭ সালের সেরা ছবি হয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এবং ২০১৮ সালের সেরা ছবি ‘পুত্র’। সেরা পরিচালক হয়েছেন ২০১৭ সালের ছবি ‘গহীন বালুচর’র নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ। ২০১৮ সালের সেরা নির্মাতা হিসেবে পুরস্কার জিতেছেন ‘জান্নাত’ ছবির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।

২০১৭ সালে যৌথভাবে সেরা নায়ক হয়েছেন ‘সত্তা’ ছবির জন্য শাকিব খান ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির জন্য আরিফিন শুভ। ২০১৮ সালে ‘পুত্র’ ছবি দিয়ে সেরা অভিনেতা হয়েছেন ফেরদৌস এবং ‘জান্নাত’ ছবি দিয়ে সেরা অভিনেতা সাইমন সাদিক। সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ২০১৭ সালে ‘হালদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং ২০১৮ সালে ‘দেবী’ ছবিতে অভিনয় করা জয়া আহসান।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দিতে জুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। গঠিত বোর্ড সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো মূল্যায়ন করে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম সুপারিশ করেছে। তারই ভিত্তিতে প্রদান করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

১৩ সদস্য বিশিষ্ট জুরি বোর্ডে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র) সভাপতি করা হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য-সচিব হিসেবে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চলচ্চিত্র) ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ২০১৭ সালের জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক এম এ আলমগীর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রগ্রাহক পংকজ পালিত ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম।

২০১৮ সালের জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, চলচ্চিত্র অভিনেতা ড. এনামুল হক, সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান, অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থার যুগ্ম-মহাসচিব তপন আহমেদ।

এবার মোট ২৮টি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। সেগুলো হলো আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী কৌতুক চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী, শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, শ্রেষ্ঠ চিত্র নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান।

শেয়ার করুন: