এসপি হারুন

আ.লীগের কোনো নেতাকেই পাত্তা দিতেন না এসপি হারুন

বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদকে বদলি করে পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার (টিআর) করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে বদলি হয়ে গত বছরের ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের এসপি হয়ে আসেন তিনি।

বছরপূর্তির এক মাস আগে গত রোববার তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়। এসপি হারুনের বদলি চলছে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা। হঠাৎ করে কেন তাকে বদলি করা হয়েছে? এমন প্রশ্ন এখন সর্ব মহলে।

তবে অভিযোগ উঠেছে এসপি হারুনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে বদলি করা হয়েছে। পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের কাছে ৮ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এসপি হারুন।

তার দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় রাসেলের গুলশানের বাসা হতে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। পরে তাদেরকে নিয়ে একটি নাটক সাজান। রাসেলের গাড়িচালক সুমনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গাড়িতে থাকা গুলি, মাদক উদ্ধার দেখিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় আম্বার গ্রৃপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলকে পলাতক আসামি করা হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে মুচলেকায় রাসেলের স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে দেয়া হয়।

রাসেলের গুলশানের বাসা হতে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার অভিযোগ এবং ৮ কোটি টাকা চাঁদার দাবির প্রেক্ষিতে এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে- এমনটাই সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে বদলির পরও এসপি হারুনকে নিয়ে সরাসরি কেই মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর পুরো জেলায় নিজের বলয়ের বেশ কিছু পুলিশ অফিসারকে অন্য জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন। আর প্রতিটি থানায় ২/৩ জন নিজস্ব অফিসার নিয়োগ দেন। বিশেষ করে ডিবি অফিসে তার নিজস্ব বলয় তৈরি করে তাদের দিয়েই নানা ধরনের কাজ হাসিল করতেন।

তিনি আরও বলেন, এসপি হারুনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলতে পারেননি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের এক এমপিকে কোনঠাসা করতে তার বলয়ের নেতাদের তালিকা করে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করা হয়। সবসময় আওয়ামী লীগের নেতাদের আতঙ্কে রাখার চেষ্টা করতেন তিনি। অনেক নেতারা আমাকে ফোন দিয়ে বললেও কিছু বলার সুযোগ ছিল না।

এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর নানা কাজ নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ১১ মাস দায়িত্ব পালন করে সর্বপ্রথম এসপি হারুন ঘোষণা দেন মাদক, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের কোনো ভাবে ছাড় দেয়া হবে। সে যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন। তিনি আশ্বাস দেন শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ উপহার দেয়ার। সেই মোতাবেক শুরু হয় এসপি হারুনের অ্যাকশন। শুরু করেন মাদক, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান। সম্প্রতি এসপি হারুন শহর ফুটপাতমুক্ত রাখতে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালান। শহরকে ফুটপাত মুক্ত করা হয়। অথচ এ হকারমুক্ত করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে এমপি শামীম ওসমানের সমর্থিত লোকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

গত ১ এপ্রিল এসপি হারুনের নির্দেশে অভিযান চালানো হয় ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত ভাসমান রেস্তোরাঁ মেরিন এন্ডারসনে। ওই সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় অর্ধশতাধিক লোককে। এ ঘটনায় মামলাও করা হয়। মামলায় এমপি শামীম ওসমানের শ্যালককে আসামি করা হয়। এরপর শামীম ওসমানের বলয়ের নেতাকর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একের পর এক এসপি হারুন এমপি শামীম ওসমানের বলয়ের নেতাকর্মীসহ তার লোকদের আটক করেন। এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কয়েকজন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরকেও গ্রেফতার করা হয়। একপর্যায়ে এসপি হারুন ও শামীম ওসমানের মধ্যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়। এসপি হারুন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকেই পাত্তা দিতেন না।

এদিকে এসপি হারুনকে বদলির পর এমপি শামীম ওসমানের বলয়ের নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছেন। তবে কেউ যেন অতি উৎসাহী হয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য না করেন নেতাকর্মীদের প্রতি এমন নির্দেশনা দিয়েছেন শামীম ওসমান। গত সোমবার সন্ধ্যায় রাইফেল ক্লাবে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং তাদেরকে এসপির বদলির বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে নিষেধ করেন। ফলে এ নিয়ে মুখ খুলছেন না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

শেয়ার করুন: