বুয়েটে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে এ ঘোষণা দেন বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।

বৈঠকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথাও জানান ভিসি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন।

ভিসি বলেন, আমি আমার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে বুয়েটে সব ধরনের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। আজ (শুক্রবার) থেকে এখন থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। আমরা বিভিন্ন দলগুলোতে চিঠি পাঠাব, যাতে বুয়েটে তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

এর আগে আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে গত বুধবার বিকালে গণভবনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্ররাই সব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকে। আমিও ছাত্ররাজনীতি করেই এখানে এসেছি।

এখন একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে কেন? তবে বুয়েট চাইলে সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। আমরা এতে হস্তক্ষেপ করব না। এরপরই শুক্রবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বুয়েটে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা জানালেন ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা। হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

শেয়ার করুন: