আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন। উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি এবার পা রাখছে একাত্তর বছরে।
অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সময়োপযোগী করার অঙ্গীকার ও তৃণমূল পর্যন্ত নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় থাকছে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করবে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এতে বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের কাছে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার করেছিলাম। অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প আছে সেখানে। প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, দলকে সময়োপযোগী করা আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমরা এ চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলার অঙ্গীকার করছি দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। এদিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন,
৭০ বছরে আমাদের বড় অর্জন স্বাধীনতা ও মু?ক্তি। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করার পর বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেয়ার আন্দোলন অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের পথচলায় নতুন মাত্রা যোগ করে। শেখ হাসিনা নির্বাচনেও সফল, আন্দোলনেও সফল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিকালে বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ২০১৯ সালে এসে বলব- দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সুবিধার জন্য অনেকে কিন্তু দলটিতে আসে। আওয়ামী লীগের শক্তি তাদের তৃণমূল।
তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এই নব্য ও সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সেটাকে স্মরণে রেখেই এই জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে। যারা সত্যিকার অর্থেই আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে একমত তাদের দলে ভেড়াতে হবে। এর সঙ্গে আরও বেশি আত্মসমালোচনা করতে হবে।
এর মধ্যে দিয়ে ভুল সংশোধন করে বিশুদ্ধতার দিকে যেতে হবে। এটা বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। তিনি জীবন দিয়ে একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। আমি আশা করি- আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে তার দলকেও শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন। আমি মনে করি সেই চেষ্টা করাটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল কাজ। ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ মুক্তিযুদ্ধের পরে পাকিস্তান শব্দটি বাদ গিয়ে দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
এদিকে সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। দিনটি উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সূর্য উদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
এছাড়া দিনটি উপলক্ষে টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১১টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। আগামীকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকাল ৪টায় আলোচনা সভার আয়োজন করবে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির মধ্যে থাকবে- সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও র্যালি, প্রচার ও পুস্তিকা প্রকাশ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।