আত্মমর্যাদা রক্ষায় মন্ত্রীত্ব ছেড়েছিলেন সোহেল তাজ

সময়টা ২০০১ সালের ভোটের পর। সারাদেশের অবস্থা সবারই জানা। বিএনপির বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ মুখ খুলতে শুরু করেছিল। টিভি মিডিয়া বলতে এটিএন বাংলা আর চ্যানেল আই। একুশে টিভি বন্ধ করে দেয় সরকার। আমি এটিএন বাংলার বার্তা বিভাগের দায়িত্বে। আওয়ামী লীগের হরতাল চলাকালে ধানমন্ডি রাসেলচত্ত্বর থেকে টেলিফোন পাই ক্রাইম রিপোর্টার মাহমুদুর রহমানের। মাহমুদ আমাকে জানায়, রাজপথে সোহেল তাজ এমপিকে পুলিশ পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে।

আরেক দিন রিপোর্টার নাজমুল হক সৈকত জানান, কর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে সোহেল তাজ মার খেয়েছেন। এভাবেই বিএনপি বিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিলেন সোহেল তাজ। ২০০৫ সালের শেষ দিকে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে সোহেল তাজের মতো আমিও ছিলাম। দেখেছিলাম, সোহেল তাজের বাচ্চাদেরকে কোলে নিয়ে বসে আছেন শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালে সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। এই সময় বিএনপির সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী বিদেশ যেতে বাধাগ্রস্ত হন বিমান বন্দরে। এই ঘটনাকে ঘিরে একজন শীর্ষনেতার সঙ্গে সোহেল তাজের বাদানুবাদ হয়। ওই নেতা ছিলেন বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে। এক পর্যায়ে অস্বস্তিকর অবস্থার তৈরি হয়। নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে সোহেল তাজ মন্ত্রীত্ব ছাড়েন। তাকে আবারও আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

একদিন রাতে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) তাজুল ইসলামের বাসায় আমি সৈয়দ আশরাফকে প্রশ্ন করেছিলাম সোহেল তাজ কি ফিরে আসবেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমাদের চার পরিবারের সঙ্গে জাতির জনকের পরিবারের সম্পর্কটা রক্তের। কোনো খারাপ সময়ে আমাদের পিতাদের মতো আমরাও জীবন দেব। সোহেল তাজের বয়স কম কিন্তু আওয়ামী লীগে কোনো খারাপ সময় দেখলে সবার আগে তাকে শেখ হাসিনার পাশে দেখবেন।

কিছুদিন আগে সোহেল তাজ আবারও আলোচনায় আসলেন তার ভাগ্নের অপহরণকে ঘিরে। সোহেল তাজ এই সময় সোচ্চার হয়ে কথা বললেন। এর পরেই মুক্ত হলো তার ভাগ্নে। এখানে আমি খারাপ কিছু দেখি না। একজন মানুষ নিজের আত্মমর্যাদার জন্য রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছেন। থাকতেই পারেন। তাই বলে কি তিনি কোনো অন্যায় অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন না? তার বাবা তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের মুক্তিরসংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বাস্তবায়ন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সকল দিক নির্দেশনা। বিশ্বাস করি, আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার সকল মানুষের রয়েছে।

এমনকি দুঃসময়ে নিজের আত্মীয় পরিজনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। প্রতিবাদ ও আত্মমর্যাদার রাজনীতি করতেন বঙ্গবন্ধু। তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটে থাকতে পারেননি। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর ৩ নভেম্বর অন্ধকার কারাগারে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছিলেন ।

শেয়ার করুন: