লিখিত আশ্বাস পেয়ে ক্লাসে ফিরলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

১৬ দফা মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে ক্লাসে ফিরেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার নোটিশ দেওয়ায় আজ শনিবার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের মুখপাত্র হাসান সরোয়ার সৈকত। তবে দাবি পূরণ না হলে আবারো আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাস অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবির কয়েকটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কয়েকটির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া একাডেমিক কয়েকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল।

১৬ দফা দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। ছবিটি ১৯ জুন দুপুরে তোলা।

এ ব্যাপারে সৈকত বলেন, নোটিশ পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। দাবিগুলো পূরণ হলে আমরা আর আন্দোলনে যাব না। তবে দাবি পূরণে অযথা সময়ক্ষেপণ করা হলে ফের রাস্তায় নামব। দাবি আদায়ে কোনো ধরনের নয়-ছয় সহ্য করা হবে না।

শিক্ষার্থীদের ১৬ দফায় ছিল: বুয়েট ফটক নির্মাণের জন্য সিভিল-আর্কিটেকচার বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন ও নকশার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার আনুষ্ঠানিক নোটিশ, নতুন নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালককে অপসারণ করে শিক্ষার্থীবান্ধব কাউকে নিয়োগ, ২০০২ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের

নামকরণ, ডাবল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিটি পুনর্বহাল, আবাসিক হলগুলোর অবকাঠামোগত কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন, সিয়াম-সাইফ সুইমিংপুল কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য উপাচার্যের স্বাক্ষরে নোটিশ, নির্মাণাধীন টিএসসি ভবন ও ন্যাম ভবনের কাজ সম্পন্ন করা, নিয়মিত শিক্ষক

মূল্যায়ন প্রোগ্রাম চালু করা, যাবতীয় লেনদেনে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বন্ধ করা ও যত গাছ কাটা হয়েছে উপাচার্যের উপস্থিতিতে তার দ্বিগুণ গাছ রোপণ, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল আইডি দেওয়া, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যায়ামাগার আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উন্নয়ন এবং পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালু।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনতে স্বতপ্রণোদিত হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সেদিন টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে মন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের দাবি মানার নোটিশ দিয়েছে বুয়েট প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন পরিচালক পদে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পদটিতে নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না, তড়িঘড়ি করে এটি করা হয়েছে। অধ্যাপক কাশেমের আগে পদটিতে থাকা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে।

শেয়ার করুন: