TAUNTON, ENGLAND - JUNE 17: Shakib Al Hasan of Bangladesh celebrates his century with Liton Das of Bangladesh during the Group Stage match of the ICC Cricket World Cup 2019 between West Indies and Bangladesh at The County Ground on June 17, 2019 in Taunton, England. (Photo by Alex Davidson/Getty Images)

বাঘের গর্জন আরেকবার দেখল বিশ্ব

সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না টাইগারদের সামনে। এমন সমীকরণের সময় বাংলাদেশ সামনে পাহাড়সম রানের টার্গেট। তবে শেষ পর্যন্ত সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বিশাল জয় ছিনিয়ে এনেছে টাইগাররা।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য শুরুটা তেমন ভালো ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বোলিং উদ্বোধন করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস। মেডেন দেন মাশরাফি।

পরের ওভারে সাইফউদ্দীনও ২ রানের বেশি দেননি। তৃতীয় ওভারে এভিন লুইসের কাছে মাত্র একটি বাউন্ডারি হজম করেন মাশরাফি। তার পরের ওভারে দ্বিতীয় বলেই আঘাত সাইফউদ্দীনের।

অফসাইডে বেরিয়ে যাওয়া বল বুঝতে না পেরে একটু খোঁচা দিয়েছিলেন গেইল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। এ নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে চার ম্যাচে দুবারই শূন্যতে আউট হলেন বিধ্বংসী এই ওপেনার।

৬ রান তুলতেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। কিছুটা বিপদেই পড়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন এভিন লুইস আর শাই হোপ, দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১১৬ রান।

থিতু হয়ে গিয়েছিল জুটিটা, চোখ রাঙানিও দিচ্ছিল। ২৫তম ওভারে এসে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান সাকিব আল হাসান। তাকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমানের ক্যাচ হন লুইস। ৬৭ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ক্যারিবীয় ওপেনার করেন ৭০ রান।

তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুুরান আর সিমরন হেটমায়ারের ৩৭ রানের জুটিটিও ভাঙেন এই সাকিব। টাইগার স্পিনারের ঘূর্ণিতে ৩০ বলে ২৫ রান করে লং অনে সৌম্য সরকারের ক্যাচ হন পুরান। ১৫৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।

সেখান থেকে ৪৩ বলে ৮৩ রানের বিধ্বংসী এক জুটি হেটমায়ার-শাই হোপের। কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে মোস্তাফিজ ঝলক দেখান। ৪০তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার।

মোস্তাফিজের ওভারের তৃতীয় বলটি মিডউইকেটে ভাসিয়ে দেন হেটমায়ার। ২৫ বলে ৫০ রানের টর্নোডো ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান হন তামিম ইকবালের চোখে লাগার মতো এক ক্যাচ। ওভারের শেষ বলটিতে দুর্দান্ত এক ডেলিভারি দেন মোস্তাফিজ, শূন্য রানেই আন্দ্রে রাসেল ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।

২৪৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে আরেকটি ঝড়ো জুটি ক্যারিবীয়দের। এবার হোপের সঙ্গী অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, ১৫ বলে ৩৩ রানের ঝড় তুলে ক্যারিবীয় অধিনায়ক আউট হন সাইফউদ্দীনের বলে, লং অফে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।

তারপরও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন শাই হোপ। বল খরচ করলেও যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত আর সেঞ্চুরি পাওয়া হয়ে উঠেনি তার। ১২১ বলে ৯৬ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হন হোপ।

শেষ ৬ ওভারে টাইগার বোলাররা বেশ চেপে ধরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এর মধ্যেও টুকটাক বাউন্ডারি মেরে রান এগিয়ে নিয়েছে তারা। শেষ ওভারের শেষ বলে ড্যারেন ব্রাভোকে (১৫ বলে ১৯) বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন।

শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রানের পাহাড়সমান পুঁজি দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন দুই পেসার মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিন। স্পিনার সাকিবের শিকার ২ উইকেট।

৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। তামিম কিছুটা ধীর গতিতে খেললও ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালায় আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। তবে দলীয় ৫২ রানে রাসেলের বলে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ২৩ বলে ২৯ রান।

এরপর ঝড়ো এক জুটি গড়েন তামিম আর সাকিব আল হাসান। সৌম্য আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ বলেই জুটিতে হাফসেঞ্চুরি পার করেন এই যুগল। ৫৫ বলেই গড়ে ফেলেন ৬৯ রানের জুটি।

কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়! এবারের বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচে রান পাননি। আজ (রোববার) বেশ দেখেশুনে খেলছিলেন তামিম ইকবাল। হাফসেঞ্চুরির খুব কাছেও চলে গিয়েছিলেন। ৪৮ রানে এসে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন বাঁহাতি এই ওপেনার।

কট্রেলের বলটি ড্রাইভ করে একটুখানি বের হয়ে গিয়েছিলেন তামিম। সুযোগ না দিয়ে তার মুখের উপর দিয়েই থ্রো করে দেন ক্যারিবীয় পেসার। তামিম ব্যাট রাখতে রাখতে ভেঙে যায় স্ট্যাম্প। ৫৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে গড়া টাইগার ওপেনারের ৪৮ রানের ইনিংসটি থামে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে।

তারপর মুশফিকুর রহীমও বেশিদূর যেতে পারেননি। ওসানে থমাসের বলে মাত্র ১ রান করে উইকেটরক্ষক শাই হোপের ক্যাচ হয়েছেন মিডল অর্ডারের এই ভরসা।

এরপর মাঠে নামেন নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস। এরপরই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন সাকিব আল হাসান। ৪০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করতে ৭টি চার মারেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পূরণ করেন সাকিব।

দ্রতই দুই উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। শুধু সাকিবই নয়, দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি করে ফেলেন লিটন দাস। ৪৩ বলে ফিফটি করতে ৪টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

শেষ পর্যন্ত এই দুই টাইগারের কাঁধে ভর করে ৪২ ওভার ২ বলে ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের সীমানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন: