পাবলিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০!

পাবলিক পরীক্ষায় পূর্ণমান ১০০-এর বিপরীতে ৪০ পাস নম্বর নির্ধারণ করা হচ্ছে। এত বছর পাস নম্বর ছিল ৩৩। এখন তা ৪০ নম্বরে নিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে, একই সঙ্গে পাবলিক পরীক্ষাল ফল প্রকাশের পদ্ধতিতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে গ্রেডিং সিস্টেম যুগোপযোগী করে সর্বোচ্চ ফল (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ-জিপিএ) ৫ এর পরিবর্তে ৪ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ‘এ প্লাস’ বলতে কিছু থাকবে না। পরীক্ষার ফল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সমতা রাখতে এ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছেন। আগামী ২৬ জুন এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন তারা। গত ১২ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সব শিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, সভায় পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সভা সূত্রের বরাতে, পাবলিক পরীক্ষার পাস নম্বর ও ফল প্রকাশ নিয়ে সভায় বিস্তর আলোচনা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই জিপিএ ৫ এর জন্য ছুটছে। অথচ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই জিপিএ ৪ এর মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এ বিষয়টি ভেবে দেখার আহ্বান জানান। এর পরই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। কারণ আমরা পৃথিবীর বাইরে নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই করতে হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, আগামী ২৬ জুন আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান বেশ কয়েক জন বোর্ড চেয়ারম্যান।পাস নম্বর বাড়ানোর ভাবনা কেন- জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠায়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলার চেষ্টা করা হচ্ছে- দেশের শিক্ষার মান পিছিয়ে পড়ছে। যদিও এ তথ্য সঠিক নয় বলে সরকার মনে করে। সে জন্য পাস নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বের বহু উন্নত দেশে পাস নম্বর ৪০ নির্ধারিত রয়েছে।’

ঐ কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিং সিস্টেম চালু করা হয়। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েই চলছে। পাশাপাশি নতুন সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন ব্যবস্থায় উত্তরপত্রে শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার প্রবণতাও আগের থেকে বেড়েছে। পরীক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষার আগে থেকেই বেশি নম্বর পাচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে, বিষয়টি এখনও চিন্তার মাঝে থাকলেও, এ বিষয়ে সংশ্নিষ্টরা সবাই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ভাবনায় রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার প্রতি বছর বেড়েই চলছে। কিন্তু দেশের বিশিষ্ট্য শিক্ষাবিদরা প্রায়াই অভিযোগ করে থাকেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা জিপিএ ৫ এর পিছনে ছুটতে গিয়ে প্রকৃত ও জ্ঞান নির্ভর শিক্ষা থেকে শুধু নিজেরাই বঞ্চিত হচ্ছে না, বরং দেশও বঞ্চিত হচ্ছে তাদের বর্তমান পাঠ দানে। যা জ্ঞান নির্ভর নয় শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর পড়া পড়ছে, এতে করে শিক্ষার মান বাড়ছে না বলে অভিযোগ করে আসছেন, পাসের হার ও জিপিএ ৫ বাড়লেও শিক্ষার মান সেই অর্থে বাড়ছে না। এসব কারণে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাসংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে আসছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে, ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ধরা হয় ৫। লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটিই সর্বোচ্চ গ্রেড। এবার এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন গ্রেডিং পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ গ্রেড হবে ৪। যার নম্বর হবে ৯৫ থেকে ১০০। এ পদ্ধতিতে লেটার গ্রেডে এ প্লাস বলতে কিছু থাকবে না। প্রতি পাঁচ নম্বরের মধ্যে থাকবে দশমিক ১ গ্রেড। পাস নম্বর হবে ৪০। এ বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) থেকেই এ পদ্ধতি কার্যকর করা হতে পারে।

শেয়ার করুন: