আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকায় ৬২ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিএমপি

রাজধানীতে অপরাধ কমিয়ে আনতে বর্তমানে ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, এসব তথ্য সংগ্রহ করা আছে সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস)।

এর মধ্যে ২ লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪ জন, মেস সদস্য ১ লাখ ২১ হাজার ৪০ জন, পরিবারের সদস্য ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১ জন এবং ড্রাইভার ও গৃহকর্মী ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জনের তথ্য রয়েছে।

শনিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে নাগরিকদের ‘তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৫ জুন থেকে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আরও জোরদার করতে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করছে ডিএমপি।

এরমধ্যে ঢাকায় ৫০ টি থানার ৩০২ টি বিটে ভাগ করে নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর ২১ জুন থেকে ডিএমপি সদর দফতর থেকে আরেকটি টিম আটটি ক্রাইম বিভাগে ভাগ হয়ে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ক্রস চেক করবেন। কোথাও কেউ বাদ পড়লে পরবর্তীতে তাদেরকে পুনরায় তথ্য ফরমের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষণ শুরু করে ডিএমপি। এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এর পাইলট প্রকল্প শুরু হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় সিআইএমএস সফটওয়্যারের কিছু সফলতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আমরা নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করি।

যারা পরিচয় গোপন করে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে চান তারা এখন ভাড়া নিতে পারছেন না। এছাড়া এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভিকটিম, অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কারণ সংরক্ষিত তথ্যে একজন ব্যক্তির জন্য আলাদা ইনডেক্স রয়েছে। ফলে একজন ব্যক্তি এলাকা পরিবর্তন করলেও আমরা তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে ডিএমপি প্রথমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এখন অন্যান্য জায়গায়ও তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আমরা কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করি।

গত তিন বছরে কোনো নাগরিকের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর অপরাধের মাত্রা কমে এসেছে। এছাড়া কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার উদঘাটনের হার ৯০ শতাংশের উপর বেড়েছে। আগে ৫০ শতাংশের বেশি রহস্যের উদঘাটন করা যেত না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রতি লক্ষ করেছি, ভাড়াটিয়া, বাড়িওয়ালা এবং পুলিশ তথ্য দেওয়া বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের চালানো অভিযানের পর খোঁজ নিয়ে দেখেছি ভাড়াটিয়া বা মালিক থানায় তথ্য দেননি।

এরকম আরও অনেক থাকতে পারে। আবার অনেকেই গ্রাম থেকে এসে বাসা ভাড়া নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেক অপরাধী রয়েছেন যারা তথ্য গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করছেন। তাই তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পুলিশ কমিশনার ১৫ মার্চের মধ্যে ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম পূরণ করে পার্শ্ববর্তী থানায় জমা দেয়ার অনুরোধ জানান। ওই সময় তিনি বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন ফরম জমা দেবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপরই পুলিশের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট হয়।

পরে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রিটটি খারিজ করে দেন। পরে ডিএমপি দুই দফা সময় বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল তথ্য সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া এখনও ফরম জমা দেননি। নয়াপল্টনের বাসিন্দা আসার আহম্মেদ জানান, তার বাসায় ফরম দেয়া হয়েছে কিন্তু সেটা কেউ নিয়ে যায়নি।

বিডিআর ৪ নম্বর গেট এলাকার বাসিন্দা কাজী হাসান জানান, তার বাসায় ফরমই দেয়া হয়নি। এরকম অনেক বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া এখনও তাদের তথ্য থানা পুলিশের কাছে জমা দেননি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নাগরিকদের তথ্য দিয়ে যে ডাটাবেস তৈরি হবে, তাতে উপকৃত হবেন সবাই। তথ্য বিশ্লেষণে জানা যাবে ঢাকায় বাড়ির সংখ্যা, নাগরিক সংখ্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম আগেই বলেছিলেন, নগরবাসীর সংগৃহীত সব তথ্য গোপন রাখা হবে। নগরবাসীর সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্যই আমরা এই কাজ করছি। জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপে বাধ্য হয়েই এ বিষয়টি করা হয়। ই-তথ্য’ শতভাগ গোপন রাখা হবে।

শেয়ার করুন: