মাদরাসায় হবে ডিজিটাল ক্লাসরুম

২০১৯-২০ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ২৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এ অর্থে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, মাদরাসা ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া স্থাপনসহ গুণগত মানোন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদি মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক স্তরের বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গত দুই বছরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ দশমিক ৬৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ দশমিক ৩ লাখ এবং আইসিটি বিষয়ে ৩ দশমিক ১৩ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অনগ্রসর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৮০টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৩৫০টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ই-বুকের প্রচলন, উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, ৩১৫টি উপজেলায় ১টি করে বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয় রূপান্তর এবং ৩২ হাজার ৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিডিমিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতে বৈষম্য দূরীকরণ ও গুণগত উৎকর্ষ সাধনে আমরা সক্রিয় রয়েছি। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিউশন ফি প্রদান করা হচ্ছে। এ খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন ও বৈশাখী ভাতা
বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক/কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) প্রদান করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছর হতে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইনোভেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম, নিবন্ধন, প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্টদের হয়রানি লাঘব হয়েছে। এ অর্থবছর হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অনুদান প্রদানের আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ
২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।

বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার আওতায় ১ হাজার ৫০০টি বেসরকারি কলেজ ও ৩ হাজারটি বেসরকারি স্কুলের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলতি মাসে শেষ হবে। সারাদেশে ২৬ হাজার ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৮ হাজার ৯৪৭টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, ২০০টি ল্যাংগুয়েজ কাম আইসিটি ল্যাব, ১ হাজারটি সায়েন্স ল্যাব, ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ, ৪৬টি হোস্টেল নির্মাণ এবং আসবাবপত্র, অফিস সরঞ্জামাদি ও আইসিটি উপকরণ সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন পাশ হওয়া ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা
মানসম্পন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি আইসসিটি খাতসহ বিকাশমান প্রযুক্তিসমূহের কারিগরি জনশক্তির প্রয়োজন মেটাতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দাখিল, কারিগরি ও এবতেদায়ী স্তরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী, দুঃস্থ শিক্ষকদের সাহায্য মঞ্জুরী হিসেবে এককালীন অনুদান প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।

মাদরাসা শিক্ষা
সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া স্থাপন করা হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দাখিল ও এবতেদায়ী স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। দেশে ১ হাজার ৮০০টি মাদরাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন: