সিপিবি

বাজেট গরিব-মধ্যবিত্তকে আরো দরিদ্র ও অসহায় করে তুলবে : সিপিবি

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট লুটেরা ধনিকদের আরও ধনী করবে এবং গরিব-মধ্যবিত্তকে আপেক্ষিকভাবে আরো দরিদ্র করে তুলবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়। সেই বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিবি নেতারা এক বিবৃতিতে দিয়েছেন। এতে গরিব-মধ্যবিত্তকে আপেক্ষিকভাবে আরো দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অসহায় করে তুলবে বলে দাবি করেছে সিপিবি। বাজেটকে তারা সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো, পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। এ দর্শনের মূলভিত্তি হলো, ধনিক তোষণ ও শ্রেণী-ধনবৈষম্য সৃষ্টি করা।

এ বাজেটে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম সমাজতন্ত্রের কোনো প্রতিফলন নেই। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বাজেটে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল জানিয়ে তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী যখন সংসদে বাজেট পড়ছেন তখন কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক দামে।

সরকার খাদ্য শস্য সংরক্ষণের জন্য গুদামের অভাব দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য শস্য ক্রয় করছে না। তারা প্রতিটি ইউনিয়নে স্বল্পকাল মজুদের উপযোগী একটি করে শস্য গুদাম তৈরির জন্য বর্তমান বাজেটে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের আহ্বান জানান। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১ শতাংশ মাত্র।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এ বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সব পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এ দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদের। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য প্রত্যক্ষ কর মূলত একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে সুদের হার কমানো হয়েছে। বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।

বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের বাজেটের আকার যেমন স্মরণকালের সর্বোচ্চ, তেমনি ঘাটতির পরিমাণও স্মরণকালের সর্বোচ্চ। ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কীভাবে অর্জিত হবে তা সুস্পষ্ট নয়। বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি।

ঘোষিত বাজেটের ক্ষেত্রে একই পরিণতি হবে। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাজেটে ঘোষিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি হবে। এ বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

এ অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে আগেরকার ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তীর মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণীকে বিশাল ভর্তুকি দেওয়া ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণীর স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনীতিতে লুটপাটের ধারা আরো জোরদার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করা, ধনবৈষম্য ও শ্রেণিবৈষম্য বাড়ানো, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বাড়ানো ইত্যাদি হবে এ বাজেটের ফলাফল। এ বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।

নেতারা বলেন, এসব মৌলিক নেতিবাচক চরিত্রকে আড়াল করার জন্য বাজেটে কিছু চটকদার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবও করা হয়েছে। কয়েকটি মেগা প্রজেক্টের জন্য বড় আকারের পৃথক থোক বরাদ্দ রাখা হলেও স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেটের কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ ‘থোক বরাদ্দ’ রাখা হয়নি।

শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানোর দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুপাতিক বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য এ কথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে।

বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবায়নে তার সক্ষমতা-যোগ্যতাও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ।

শেয়ার করুন: