বিটিআরসি

প্রতি সেকেন্ড পালস দিয়ে কাটা হচ্ছে বেশি টাকা

সেলফোন অপারেটরদের কলপ্রতি ১০ সেকেন্ড পালস চালু করতে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কিন্তু সে অনুযায়ী প্রতি সেকেন্ড পালসে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। এদিকে টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে ২০১৬ সালে প্রথম গণশুনানির আয়োজন করেছিল বিটিআরসি। এর পর থেকে প্রতিবছরই এ আয়োজনের কথা থাকলেও হয়নি।

বুধবার (১২ জুন) তিন বছর পর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে প্রায় ৫০০ অতিথির উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের গণশুনানির অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ উঠে।

সেখানে অংশ নিয়ে সেবার মান ও ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের নামে টাকা গচ্চা যাওয়ার ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। আবদুস সালাম নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, প্রতি সেকেন্ড পালসের প্যাকেজ কিনে কথা বললেও তার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে থেকে ৩ জুন বিটিআরসির ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে ২০২ গ্রাহক মোট ১ হাজার ৩১৯টি প্রশ্ন, অভিযোগ ও মতামত জানান। গণশুনানি সংশ্লিষ্ট কমিটি পরবর্তী সময় সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ১৬৫ জনকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। গতকাল উপস্থিত থেকে গ্রাহকরা মোট ১৭টি প্রশ্ন করেন।

এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে আসে ৩০-৩৫টি প্রশ্ন। পরে বিটিআরসি জানায়, সব প্রশ্ন ও অভিযোগের সুরাহা করে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। অভিযোগকারীদের একজন ছিলেন আতাউর রহমান।

তিনি জানান, তার বৃদ্ধ মা গ্রামে থাকেন। মায়ের ফোনটি ফিচার, স্মার্টফোন নয়। হঠাৎ ব্যালান্স থেকে ৪৮ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এর কারণ জানতে চাইলে মোবাইল অপারেটর জানায়, ইন্টারনেটে গেম খেলার কারণে এ টাকা কাটা হয়েছে। আতাউরের প্রশ্ন, তার মা কখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।

গেম খেলার তো প্রশ্নই ওঠে না। এভাবেই অসচেতন মানুষের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা টাকা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন গ্রাহক শুনানিতে অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার পরও টাকা কেটে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডেটা বান্ডল) এবং এর মূল্য সম্পর্কে অভিযোগ ছাড়াও

বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, সাইবার অপরাধ, মোবাইল ফোনে হুমকি, ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ফাইভ-জি, অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, মোবাইল অপারেটরদের কলসেন্টারের মাধ্যমে সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ আসে।

গণশুনানিতে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করেছে অভিযোগ তুলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, ‘তিন বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানির অভিযোগ আজ কেন প্রকাশ করা হচ্ছে? গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও বিটিআরসির কেন এ ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই? সেই সঙ্গে আজ গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে অপারেটররা মতামত না দিয়ে কমিশন কেন তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে?’

গণশুনানির শেষভাগে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, গ্রাহকের সব ধরনের সমস্যার সমাধানে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

শেয়ার করুন: