চমকের বাজেট ঘোষণা আজ

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামের এবারের বাজেট বক্তৃতা ছোট হবে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাজেট বক্তৃতা শেষ করবেন অর্থমন্ত্রী। তবে এবারের বাজেট উত্থাপনের দিন ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে বাজেট বইয়ের সংখ্যা ২৬টির মতো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করতে যাওয়া বাজেট বক্তৃতার মূল পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ৫০। এর প্রায় ৪০ পৃষ্ঠাজুড়ে থাকবে বাজেটে পরিসংখ্যান এবং সরকারের নানা আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফিরিস্তি। বাকি ১০ পৃষ্ঠায় থাকবে রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়। পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে।

নতুন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশাল এই বাজেট ব্যয় নির্বাহের জন্য শুধু ব্যাংকিং খাত থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ধার নেওয়া হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় ও ভ্যাটের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। নতুন করে প্রায় এক কোটি মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন করদাতা খুঁজে বের করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে ১০ হাজার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

দেশের জনগণের ওপর নতুন কোনও করচাপ তৈরি করতে চান না অর্থমন্ত্রী। এজন্য তিনি এবারের বাজেটে করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবেন, যাতে করহার না বাড়িয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করা যায়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেটের করহারের বিষয়ে একাধিবার বলেছেন, করের হার বাড়িয়ে কোনও ধরনের করচাপ তৈরি হোক, এটা তিনি চান না। বরং করজাল সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে চান।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য কানন কুমার রায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে জানান, আগামী এক বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় করদাতা বাড়ানোর লক্ষে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে এবারের বাজেটে।

বেকারদের জন্য প্রথমবারের মতো ‘উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষে আগামী বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ থাকতে পারে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যেভাবে প্রনোদনা পেয়ে আসছে, আরও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রনোদনা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ঋণ ব্যবস্থার প্রস্তাব থাকবে এবারের বাজেটে।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৪ হাজার ৫০০ কোটি, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আগামী বাজেটে জনগণের ওপর কিছুটা করের বোঝা থাকার আশঙ্কা থাকলেও প্রথমবারের মতো বেকারদের ঋণ তহবিল, প্রবাসীদের জন্য বীমা সুবিধাসহ বেশকিছু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগের প্রস্তাব থাকছে, যা আগের কোনো বাজেটে ছিল না।

বেকার তরুণদের জন্য থাকছে সুখবর

শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য সুখবর থাকছে নতুন বাজেটে। তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তরুণরা যাতে সহজে ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্য আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে এবারের বাজেটে। ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে এতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব যুবক ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন, তাদের প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ করা হবে এই তহবিল থেকে। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের জন্য সবসময় বরাদ্দ দেয়া হলেও বাজেটে তরুণদের জন্য সরাসরি সহায়তার এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত ফান্ড কীভাবে পরিচালনা করা হবে, কত টাকা দেয়া হবে, ঋণ হিসেবে দেয়া হবে নাকি অনুদান দেয়া হবে- এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। ওই নীতিমালার ভিত্তিতে এই সহায়তা দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে আসন্ন বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। পরে চাহিদা বাড়লে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে।’

প্রবাসীদের জন্য আসছে বীমা সুবিধা

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা থাকছে আগামী বাজেটে। এর আওতায় বীমাকারী মৃত্যুবরণ করলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধ করার কথাও থাকবে।

সূত্র জানায়, প্রবাসীকর্মীদের বীমা সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বীমা সুবিধার প্রয়োজনীয়তা, কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা, কর্মকালীন সম্ভাব্য ঝুঁকিসহ অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় বিবেচনায় আনা হয়েছে। বীমার প্রকারভেদের ক্ষেত্রে বলা হয়, এ নীতিমালার আওতায় প্রবাসীকর্মীদের জীবন বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে।

সাধারণত মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা সুবিধায় প্রিমিয়াম হার ও বীমা অঙ্ক বীমা-গ্রহীতাদের বয়সভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। তবে প্রবাসীকর্মীদের একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বীমা পরিকল্পটি বা পলিসিটি সহজীকরণের লক্ষ্যে বীমা-গ্রহীতাদের বয়স নির্বিশেষে অভিন্ন প্রিমিয়াম হার আরোপ করা হবে।

পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু হবে শস্যবীমা

গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন বৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করতে দিকনির্দেশনা আসছে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যেন শহরে ছুটতে না হয়, সেজন্য গ্রামবান্ধব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার।

চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকের জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চালু করা হবে শস্যবীমা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হবে একটি জেলাকে। পরবর্তী সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।

শেয়ার করুন: