বেশিরভাগ খাদ্যেই মেশানো হচ্ছে টেক্সটাইল রং

দেশের বেশির ভাগ খাদ্যেই ফুড গ্রেড কালারের পরিবর্তে ট্রেক্সটাইল কালার মেশানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। কিছু অসাধূ ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় এ ঘৃন্য কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার (১২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে খাদ্যভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক পদায়ন, খাদ্যব্যবস্থাপনার নজরদারি নিশ্চিত করণের দাবিতে স্বাধীনতা সেনিটারিয়ান পরিষদ (স্বাসেপ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আধ্যাপক ফারুক বলেন, ফুড গ্রেড কালারের দাম একটু বেশি হওয়ায় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন খাবারে টেক্সটাইল কালার মেশাচ্ছেন। এর ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার রোগ বাসা বাঁধছে।

তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশুরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব ভয়াবহ কেমিক্যাল খাবারে মেশানোর কারণে শিশুদের অস্থিমজ্জা এখন থেকেই ক্ষতির মুখে পড়ছে।

খাদ্যে ভেজাল নিয়ে এখানো অনেক মামলা আদালতে আছে উল্লেখ করে আ ব ম ফারুক বলেন, আইন বিভাগ ও সরকার যদি খাদ্যে ভেজাল নিরোধ নিয়ে একসাথে কাজ করেন তাহলে দেশ ভালো থাকবে।

সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন ফরমালিন আমদানি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগে দেশে বছরে ৭০০ মেট্রিক টন ফরমালিন আমদানি হতো এখন সেটা নামিয়ে ১০০ মেট্রিক টনে এসেছে।

বড় প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ফারুক আরো বলেন, দেশের নামকরা কোম্পানির পণ্যের লাইসেন্স যখন ভেজালের বাতিল করতে হয়, তখন আমরা কোথায় যাবো? এইসব কোম্পানির আরো কত টাকা দরকার, তারা কি দেশের কথা ভাববেন না?

তিনি বলেন, বর্তমানে কোন খাদ্য নির্ভেজাল তা খুঁজে বের করাই এখন বড় সমস্যা। তিনি সরকারের কাছে খাদ্যভেজাল প্রতিরোধে টেকনিক্যাল জনবল নিয়োগের বিষয়ে আহ্বান জানান।

এ সময় স্বাধীনতা সেনিটারিয়ান পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা তাদের দাবি সম্বলিত একটি প্রবন্ধ পাঠ করা হয়। এতে বলা হয় খাদ্যভেজাল প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২২০০ দক্ষ-জনবল একযোগে কাজে লাগানোর কথা। অপর্যাপ্ত নজরদারীর কারণে সুপার শপে বিক্রী হচ্ছে পঁচা মাছ, মাংস, খেজুর।

অথচ ভেজাল প্রতিরোধের জন্য ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার ৫৫৬ টি সেনেটারি ইনেস্পেক্টর পদ সৃষ্টি করেছিলেন। গড়েছিলেন পাবলিক হেলথ ইনিস্টিটিউট। জাতি তথা ২২০০ সেনেটারি ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের দূর্ভাগ্য ৭৫ ট্র্যাজেডির পরবর্তী সামরিক সরকার জনগণের খাদ্য পুষ্টি উন্নয়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে নতুন পদও সৃজন হয়নি। তাই সম্ভবনার এই বিশাল কর্মী-বাহিনী একদিকে কার্যতঃ যেমন বেকার তেমনি জনগণের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে।

খাদ্য ভেজাল জনিত ২০০ রোগের সুনামিতে আমরা আক্রান্ত। ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় হিসাবে হাজার হাজার কোটি টাকা।

প্রবন্ধে আরো বলা হয় ২ হাজার ২০০ জনবলকে যদি ‘নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক অথবা ‘সেনিটারি ইন্সপেক্টর’ হিসাবে সুপার নিউমারারী পদ সৃজনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয় তাহলে (১) প্রশিক্ষিত জনবল সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত থেকে জনগণের নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারবে (২) প্রিমিসেস ফি/নবায়ন-ফি বাবদ প্রতিবছর রাষ্ট্রের ২৫০ – ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে (৩) ভেজাল খাদ্যে উদ্ধৃত দুই-শতাধিক রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে (৪) জনগণের চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস হবে (৫) চিকিৎসা ব্যয় হিসাব বিদেশে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার রোধ করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন ও স্বাধীনতা সেনিটারিয়ান পরিষদ (স্বাসেপ) এর সাংগঠনিক উপদেষ্টা এম. খছরু চৌধুরীসহ আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন: