প্রেস কনফারেন্সে না এসেও দেশি মিডিয়ার সামনে অন্য এক মাশরাফি!

সেই সাত সকালে তৈরি হয়ে বসেছিলেন। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আর মাঠে আসা হচ্ছিল না। ম্যাচ অফিসিয়ালরা সেই সকাল থেকে তাকে মানে টিম বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখলেন। প্রথমে বলা হলো, স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে টিম বাস ছাড়তে।

তারপর তা বাতিল করে আরও দুইবার হোটেল থেকে মাঠে আসার সময় বেঁধে দেয়া হলো। সেটাও বাতিল করে শেষ অবধি স্থানীয় সময় সময় দুপুর সোয়া একটা নাগাদ দলের সাথে মাঠে আসলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু ঐ মাঠে আসাই সার। বসে থাকতে হলো ড্রেসিং রুমে। মিনিট চল্লিশ ড্রেসিং রুমে বসে থাকার পর ব্রিস্টল সময় বেলা ১ টা ৫৭ মিনিটে ম্যাচ পরিত্যক্তর ঘোষণা শুনলেন টাইগার মাশরাফি বিন মর্তুজা।

এ যেন বিনা কারণে মাঠে আসা এবং হতাশ হয়ে আবার হোটেলে ফেরা। কিন্তু তারপরও রীতি মেনে বাংলাদেশ অধিনায়ককে আসতে হলো মিডিয়ার সামনে। তবে সেটা ম্যাচ শেষের প্রেস কনফারেন্সে নয়। প্রতিদিন খেলা শেষে যে তাৎক্ষণিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলতে হয়, সেখানে। যেহেতু খেলা হয়নি।

তাই পুরস্কার বিতরণের প্রশ্নই আসেনা। বিজয়ী আর বিজিত দলের অধিনায়কের কথোপকথনের কোন অবকাশই নেই। তবে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগির ম্যাচে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের সাথে কথা বলতে হলো বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।

অন্য দিন এ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর অনুষ্ঠান হয় মাঠের ভিতর। আজ বৃষ্টিতে সেই কথা বার্তার পর্ব চললো ব্রিস্টলের গ্লুষ্টারশায়ার ক্লাবের ইনডোরে। পাশেই প্রেস কনফারেন্সের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটনের সাথে ঐ কথোপকথনে অংশ নেবার আগে ব্রিস্টল কাউন্টি ক্লাবের ইনডোরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেন মাশরাফি। সেখানে এক অন্য মাশরাফির দেখা মিললো যেন।

ঠোঁটের কোণে জমে থাকা সেই সব সময়ের হাসিটা নেই। অন্য দিন চোখে মুখে যে প্রাণোচ্ছলতা থাকে, তাও অনুপস্থিত। চোখে মুখে ব্রিস্টলের হতাশার কালো মেঘ ভর না করলেও মুখটা অন্য সময়ের চেয়ে ভার। পরিচিত সাংবাদিকদের সাথেও অন্য সময় যে খুনসুঁটি আর রসিকতা করেন, আজ (মঙ্গলবার) তাও করলেন না তেমন।

সম্ভাব্য জয় হাতছাড়ার পাশাপাশি মাশরাফির মন খারাপের আরও কারণ আছে। আগের তিন ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে না পারা মাশরাফি তেঁতে ছিলেন এ ম্যাচে নিজেকে আবার ফিরে পেতে।

শ্রীলঙ্কার সাথে তার ট্র্যাক রেকর্ড বেশ ভাল। লঙ্কানদের সম্পর্কে তার ধারণাটাও অনেক পরিষ্কার। কে কোথায়, কোন জোনে ভাল খেলেন, কার কি দুর্বলতা, তাও বেশ ভাল জানা। লঙ্কানদের সাথে ছন্দ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তাই একটু বেশিই ছিল।

মুখে না বললেও সম্ভাব্য জয় হাতছাড়ার পাশাপাশি এটাও একটা আক্ষেপ মাশরাফির। সব মিলেই হয়ত অন্য যে কোন দিনের চেয়ে একটু চুপচাপ ছিলেন। এক সময় ডাক পড়লো মাইক আথারটনের সাথে টিভিতে কথা বলায়। ধীর পায়ে হেটে খুব নিচু স্বরে কথা বললেন টাইগার ক্যাপ্টেন।

খুব বেশি প্রশ্নর মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটন যেন গায়ে পড়ে বাংলাদেশ অধিনায়ককে একটু বাউন্সার ছুড়ে পরীক্ষা নিলেন। টনটনের ছোট আউটফিল্ডে ক্রিস গেইল, শাই হোপ আর আন্দ্রে রাসেলরা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারেন। এমন ইঙ্গিত করে আথারটন প্রশ্ন ছুড়লেন-

‘আচ্ছা মাশরাফি, আপনাদের পরের খেলা তো টনটনে। সেখানে আউটফিল্ড তো খুব ছোট। খেলতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে। সেটা কি একটু চিন্তার কারণ?’

মাশরাফির জবাব, ‘হ্যাঁ, আমিও শুনেছি টনটনের আউটফিল্ড ছোট। কি আর করা? আমাদের যে শক্তি ও সামর্থ্য আছে, তা নিয়েই ক্যারিবীয়দের মোকাবিলার চেষ্টা করবো।’

তারপর কথা শেষ করে মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের সাথে হেঁটে চলে গেলেন টিম বাসের উদ্দেশ্যে। তাকে চলে যেতে দেখে উপস্থিত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কৌতুহলি প্রশ্ন, মাশরাফি কি আজ আর পোস্ট ম্যাচের প্রেস মিটে থাকবেন না? কথা বলবেন না?

টাইগার দলপতির জবাব, ‘নাহ, আজ আর আমি না। প্রেস কনফারেন্সে আসবেন, কথা বলবেন কোচ স্টিভ রোডস।’ শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো। আজ ম্যাচ না হওয়া দিনে অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন কোচ রোডসই।

শেয়ার করুন: