নয়াপল্টন-নাইটিঙ্গেল সীমাবদ্ধ বিএনপির আন্দোলন!

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় এবং লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলীয় ইতিহাসে চরম সংকটপূর্ণ মুহূর্তে এসে পতিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলীয় প্রধান দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে কারাবন্দি।

দলের শীর্ষ নেতাসহ খালেদা জিয়ারা আইনজীবীরা বলছেন আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর যেসকল আন্দোলন হয়েছে তাতেও তার মুক্তি সম্ভব নয় এটাও বলছেন দলের নেতারা।

বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে- প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, আলোচনা সভা এবং কালোপতাকা প্রদর্শণ। এছাড়া কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সাম্প্রতিক সময় দেখা যায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। আর এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন দলের এই মুখপাত্র।

গত বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার ১১ দিন আগে থেকে পরিবারের সঙ্গ ছাড়া নয়াপল্টন দলের কার্যালয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। সেই থেকে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বাই ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি একটি কক্ষে আড়াই ফুট বাই ৪ ফুট আট ইঞ্চি একটি খাটে বসবাস তার। ইতিমধ্যে এই ছোট কক্ষেই তিনটি ঈদ কাটিয়েছেন বিএনপি এই নেতা। কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন এবং কার্যালয়ের সামনে যত মিছিল হয়ে থাকে তার নেতৃত্ব দেন বিএনপির এই মুখপাত্র।

এদিকে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যও বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন করার মুরোদ নেই। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন প্রেসক্লাব-নয়াপল্টনে আটকে আছেন। খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করতে না পারা বিএনপির ব্যর্থ নেতাদের স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ১৬ মাস যাবৎ কারাবন্দি। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য দলের মধ্যে কোন ধরনের কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূলে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। কোন কর্মসূচি না দেওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রোগ্রামে তোপের মুখে পরেন দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। সবসময় আন্দোলন আসবে ধর্য্য ধরুন বলে সান্তনার দেয়া হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নয়, বরং তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিনি দিন চাপা ক্ষোভ বেড়েই চলছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা দলটি এখন সংকটের মুখে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আন্দোলন নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। কর্মী সমর্থকদের প্রশ্ন- তাদের দলীয় প্রধান কবে মুক্তি পাবে? যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ার কোন অবস্থাতেই দলীয় প্রধানের মুক্তি হবে না, তাহলে আন্দোলন হচ্ছে না কেন এমনটাই বলছেন কর্মী-সমর্থকরা।

দলটির সিনিয়র নেতারা বারবার বলে আসছেন গণতন্ত্রের মুক্তি আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। তাই আন্দোলনের দিকেই যাচ্ছে দলীয় নেতারা। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে দলকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দলকে পুনর্গঠন করেই আন্দোলনের নামার পরিকল্পনাও এঁটেছেন নীতিনির্ধারকরা।

শেয়ার করুন: