রাজধানীর ৪৫% বাড়ির মালিক প্রাপ্ত ভাড়ার চেয়ে কম রাজস্ব দিচ্ছে, ২৫% দেয়ই না

মাস শেষে হিসাব কষে ভাড়া আদায় করলেও অধিকাংশ বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াকে রসিদ দেয় না। অনেকে আবার রসিদ দিলেও তাতে আদায়কৃত অঙ্কের চেয়ে কম দেখানো হয়। এভাবে অনেক বাড়ির মালিক মোটা অঙ্কের বাড়িভাড়া আদায় করলেও তথ্য গোপন করে সরকারকে কম রাজস্ব দিচ্ছে। অনেকে আবার তাও দিচ্ছে না।

রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৩০ হাজার টাকা বা তার বেশি আয়ের বাড়ির মালিকদের ব্যাংক হিসাব ও বাড়িভাড়া পরিশোধসংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখে রাজস্ব ফাঁকির এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

উচ্চ আয়ের বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে প্রকৃত ভাড়া অনুয়ায়ী কর আদায় করতে পারলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে। বাড়িওয়ালাদের রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

বিভিন্ন কর অঞ্চলে গচ্ছিত আয়কর রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখে, কর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এবং সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে বাড়িওয়ালাদের বিষয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিচ্ছিন্নভাবে গত দুই বছরে বাড়ির মালিকদের রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ উচ্চ আয়ের বাড়িওয়ালা ভাড়া হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ আদায় করছে রাজস্ব দিচ্ছে তার চেয়ে কম।

শতকরা ২০ থেকে ২৫ জন রাজস্ব পরিশোধই করে না। এনবিআর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি আভিজাত্যপূর্ণ এলাকার এক লাখ ৭৮ হাজার বাড়ির মালিক বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।

শতকরা ৬০ থেকে ৭০ জনই এনবিআর কর্মকর্তাদের বাড়িভাড়ার রসিদ দেখাতে পারেননি। শুধু রাজধানী ও চট্টগ্রামের পাঁচটি কর অঞ্চলে চার লাখের বেশি বাড়ির মালিকদের ইটিআইএন নেই। আবার ইটিআইএন থাকলেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি এমন বাড়ির মালিকের সংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকে বড় বড় বাড়ির মালিক হয়েও ভাড়ার পরিমাণ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী অর্থবছর থেকে কঠোর নজরদারি থাকবে। এই ফাঁকি বন্ধ করা গেলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘বাড়িভাড়া থেকে সরকার কম রাজস্ব পাচ্ছে। এ বিষয়ে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে গেলে বিভিন্ন বাধা আসে।

এর কারণ বাড়ির মালিকরা সম্পদশালী ও প্রভাবশালী। বাড়িভাড়া লেনদেন হিসাবের মধ্যে এলে যখন তখন ভাড়া বাড়ানোর মতো পদক্ষেপও নিতে পারবে না মালিকরা।’

প্রসঙ্গত, বাড়ির মালিকদের ভাড়া আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বাড়িভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশি আয়ের বাড়িভাড়া পৃথক ব্যাংক হিসাব খুলে আদায় করতে হবে।

কিন্তু প্রভাবশালী বাড়ির মালিকদের দাপটে মাত্র ২২ দিনের মাথায়ই ধারাটি সংশোধনে বাধ্য হয় এনবিআর। নানামুখী চাপের মুখে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব ঘোষণার মাত্র ২২ দিনের মাথায় পৃথক ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার পরিবর্তে পুরনো ব্যাংক হিসাবে বাড়িভাড়া জমা দেওয়ার আগের বিধান কার্যকর করা হয়।

শেয়ার করুন: