‘আমার কথা ভাইবো না, মাইয়াডারে ঈদে জামা কিনে দিও’

‘আমার কথা ভাইবো না, মাইয়াডারে ঈদে জামা কিনে দিও।’ এভাবেই আদালতের প্রিজন ভ্যান থেকে এক আসামি জোরে চিৎকার করে তাঁর স্ত্রীকে বলছিলেন। আজ বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার জেলা জজ আদালত ভবনের ফটকের সামনে এ চিত্র দেখা যায়।

সেখানে দেখা যায়, অনেক আসামি প্রিজন ভ্যান থেকে তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলে নিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো স্বজন তাঁর ছেলে, বাবা, ভাইকে একটু দেখার জন্য প্রিজন ভ্যানের সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়াচ্ছেন। কেউবা ছেলেকে একটু ভালোমন্দ খাওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানের ফাঁক দিয়ে কিছু টাকা দিচ্ছেন। আবার প্রিজন ভ্যান থেকে কোনো কোনো আসামি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজ নিচ্ছেন।

প্রিজন ভ্যানে থাকা রিফাত নামের এক আসামির স্ত্রী বলেন, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে হেরোইনের মামলা দেওয়া হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। স্বামী কারাগারে থাকায় খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। কারাগারে স্বামীর ভালোমন্দ খাওয়ার জন্য সপ্তাহে টাকা দিতে হয়।

ওই নারী বলেন, এখন সামনে ঈদ। মেয়েকে জামা কিনে দিতে পারি নাই। গত রোজার ঈদেও স্বামী জেলে ছিল, এবারও জেলে আছে। কারাগারে দেখা করতে গেলে অনেক দূর থেকে কথা বলতে হয়। তাই কোর্টে আসি। কাছে থেকে দেখা যায়, আবার সরাসরি কথা বলতে পারি। পছন্দ মতো খাবারও দিতে পারি। মেয়েটাকে জামা কিনে দিতে পারি নাই। তাই স্বামী বলেছে, ‘আমার কথা ভাইবো না, মাইয়াডারে ঈদে জামা কিনে দিও।’

হনুফা নামের এক নারী জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। ছেলে ছয় মাস ধরে কারাগারে। আজ জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোর্ট জামিন দেয় নাই। ঈদের আগে ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য কোর্টে আসছি। অনেকদিন ধরে পোলাডারে নিজ হাতে রাইন্দা কিছু খাওয়াই না। তই আইজ্জকা পোলাডারে খাওয়াইছি।

এদিকে সামনেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর ঈদের শেষ কর্মদিবস কাল। ঈদের আগে অনেক আসামির আজ জামিন মঞ্জুর হয়েছে। সেসব আসামি কালকের মধ্যে কারাগার থেকে মুক্তি পাবে। জামিন পাওয়া আসামিদের স্বজনদের মধ্যে দেখা যায় হাসি।

তানভীর নামের এক ব্যাক্তি বলেন, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা ছিল। আদালত আজ তাঁর ভাইকে জামিন দিয়েছেন। এখন ভাইকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীকাল কারাগার থেকে মুক্তি পাবে। নিজের কাছে খুব খুশি লাগছে। ভাইয়ের সঙ্গে এবার একসাথে ঈদ করতে পারব।

শেয়ার করুন: