দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি; আগামী ৩০ মে পুনর্বার সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন মোদী।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সার্কভুক্ত সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। তখন সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।
কিন্তু পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্যে তা ঘটছে না বলে নয়া দিল্লির কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকে কাশ্মির নিয়ে দুই দেশের বিরোধ চলছে; একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর এই প্রতিবেশী দেশ দুটি।
মাঝে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্পর্কের বরফ গলার পরিবেশ বেশিদিন টেকেনি। ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই বছরের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ না বাঁধার পর মোদীর জয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইমরান; দুদিন আগে টেলিফোনেও দুজনে কথা বলেন। কিন্তু ৩০ মে শপথ অনুষ্ঠানের যে প্রস্তুতি ভারত সরকার নিয়েছে, তাতে ইমরান খানের অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ দেখা যাচ্ছে না বলে ভারতের গণমাধ্যমেও খবর এসেছে।
রয়টার্স লিখেছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধানোর ফায়দা নিয়ে মোদী ক্ষমতায় টিকে যান বলে অনেকের ধারণা রয়েছে, কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তান বাদ পড়ায় দুই দেশের সম্পর্ক অচিরে উষ্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির উল্লেখ করে রয়টার্স লিখেছে, এবার বিমসটেক জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতাদেরই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। নয়া দিল্লির আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণের তালিকায় পাকিস্তান নেই।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ককে পাশে রেখে গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গোপসাগরীয় অর্থনৈতিক জোট বিমসটেককে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। এই জোটে ভারত ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৩০ মের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
‘প্রতিবেশীরা আগে’- এই নীতিতে বিমসটেক দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়; গতবারও একই নীতিতে সার্ক দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভারতের গণমাধ্যম বলছে, এবার পাকিস্তানকে বাদ দিতেই সার্কের বদলে বিমসটেককে সামনে আনা হয়েছে।
মোদী অভিষেকে ইমরান খানকে এড়ালেও আগামী মাসেই কিরগিজস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে একসাথ হতে পারেন দুজন। ওই সম্মেলনে দুই নেতারই যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানে সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিরগিজিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও ভারত মহাসাগরীর দ্বীপরাষ্ট্র মরিসাসের প্রধানমন্ত্রীও আমন্ত্রণ পেতে যাচ্ছেন বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেখা গেছে।