খালেদা জিয়ার বালিশের দাম কত?

আজব দেশ, বালিশ নিয়ে চলছে বাহাস, এই বাহাসে লিপ্ত আমজনতা, আওয়মী লীগ-বিএনপি সঙ্গে বাম নেতারা। শেষ ফল কী? টিভি আলোচনা শেষ হয়েও হল না শেষ! বির্তক চলছে, আরও কিছু দিন চলবে, নতুন খোরাকের অপেক্ষায় দেশবাসী।

বালিশ কাণ্ড নিয়ে আর কত দিন চলবে প্রশ্ন, এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। সামাজিক যোগাযোগম্যাধ্যমে রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের বালিশ নিয়ে চলছে মাতামাতি। কী আর করা বাঙালি, কিছু নিয়ে মেতে থাকা বলছেন বিজ্ঞজনরা। কাজ নেই, তো খই ভাজ! বালিশ বিতর্ক যেন ছাড়ছে না দেশ। আশ্চর্য, সেই বালিশের দাম কত? এ নিয়ে কেন এত, দেশ জুড়ে চলছে গপ্প।

সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য দিয়েছেন তুমল বেগে- কী করছে না সরকার? দুর্নীতি, সন্ত্রাস আরও বহু কিছু তবে অবাক হই না, কারণ দেশবাসীর উপর সরকারের যদি কমিটমেন্ট না থাকে তখন এমন কেলেঙ্কারি হরহামেশায় ঘটবে।

একেকটা বালিশ ৫০০০ না ৬০০০ টাকা, একটা বালিশ ফ্ল্যাটে তুলতে ৭৬০ টাকা করে লেগেছে, আমার মনে হয় না, শ্রমিক ৬০ পয়সা করে পেয়েছে, কী চলছে দেশে? এখন রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বালিশ কেলেঙ্কারিকে আড়াল করা জন্য খালেদা জিয়ার বালিশ নিয়ে চলছে বোগাস কথা বার্তা। এসব কিন্তু ভালো না।

আ’লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু শত্রু নন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার জোরে এখন এমন কর্মকাণ্ড করছে যেন পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে বড় কোন শত্রু তাদের নেই। আমরা আপনাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাড়া অন্য কিছু নয়। দেশটাকে ডুবাবেন না।

দুর্নীতির সব মাত্রা শেষ করে ফেলছেন দাবি করে খোকন আরও বলেন, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারত- রাশিয়া সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারে কাজ শেষ করেছে। সেই কাজ আমাদের সরকার এগার বিলিয়নে করছে, এরপরও কি আমার আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলবেন এখানে দুর্নীতি হচ্ছে না?

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে, টিভি ক্রয় করেছে ৮৭০০০ হাজার টাকা করে, আর সেই টিভি ফ্ল্যাটে তুলতে খরচ হয়েছে ৭০০০ টাকায়, এর পরও কেন ক্ষমতাসীন সরকার এটাকে ঢাকার চেষ্টায় খালেদা জিয়ার বালিশের কথার উদাহরণ দিচ্ছে। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই বর্তমান সরকারের দায়িত্ব বোধ নিয়ে।

প্রকল্পের গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এমন মহা কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর তাকে শুধু সরিয়ে দেয়া হয়েছে, কেন তাকে গ্রেফতার করা হল না। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই দুর্নীতির সাথে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের কারও হাত রয়েছে এমন দাবি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের।

তখন বিএনপির এই নেতাকে বার বার প্রশ্ন করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ওয়ার্কস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, আমি আপনার (ব্যারিস্টার খোকন) কাছে জানতে চাই, খালেদার বালিশের দাম কত?

এর আগে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এক একটি বালিশের লাখ টাকার উপরে। এ সময় বাদশাকে থামিয়ে, কেন বাদশা ভাই আপনি এমন অবান্তর প্রশ্ন করছেন, আপনাকে সম্মান করি। আওয়ামী লীগে মন্ত্রী-এমপিদের মত মিথ্যা তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরে নিজের ইমেজকে নষ্ট করছেন?

আমাদের হয়তো বা ভুল-ত্রুটি আছে, কিন্তু আপনি শুধু রাজনীতিবিদ নন একজন দেশ বরেণ্য সমাজকর্মী। আপনার মুখে এসব কথা (খালেদা জিয়ার বালিশের দাম) মানায় না। আমরা আপনাদের কাছ থেকে সমাজ সংস্কার মূলক কথা শুনবো, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই আপনাদের মুখ মানায়। বিনয়ের শুরে খোকন বলেন, আপনি এমন কথা বলতে পারেন না।

এরপর ফজলে হোসেন বাদশা জবাব দেন, কে বলবে দেশে বাক স্বাধীনতা অনুপস্থিত? যা বলছেন সব কিছুই তো আপনি বলছেন। আমাদের তো কিছুই বলতে দিচ্ছেন না। আমি জানি, খালেদা জিয়ার এক একটা বালিশের দাম লক্ষ টাকার উপরে। শুধু আটকে দিলে হয়, আমাকে বলতে দিন, আমি সত্যকে সত্য বলতে শিখেছি, কেউ আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়নি। খালেদা-এরশাদ সকলের বালিশের দাম আমার জানা।

ব্যারিস্টার খোকন আবার বলেন, আপনার জানার ভুল আছে, আমি খালেদা জিয়ার ঘরে ডুকেছি, এমনটা আমার মনে হয়নি। অযথা বড় একটা দুর্নীতিকে ঢাকার জন্য নিরন্তর চেষ্টা কেন? আপনার কাছ থেকে এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না।

এ জন্যই খালেদার বালিশের দাম নিয়ে চলছে নাটক? আর এ নাটক করছে সরকার। সেই নাটকে আপনার মত মানুষরা সামিল হলে ভালো লাগে? আপনাকে সম্মান করি বাদশা ভাই।

এ সময় এরশাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্র নেতা জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা শফী আহমেদ বলেন, সব কিছুই খোকন ভাই বলছেন, কি আর বলা। তবে একটার সাথে অন্যটার সাফাই গাওয়া ভালো না।

রুপপুর বালিশ কাণ্ড যেমন ঘৃণ্যত কাজ তেমন এমন দরিদ্র দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিলাসী জীবন-যাপনের চিত্রও তুলে ধরা দরকার। কী করে একজন প্রধানমন্ত্রী লক্ষ টাকার উপরে বালিশ ব্যবহার করতেন। এটাও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই নেয়া হয়েছে। এটা জানার অধিকার আছে দেশবাসীর।

সম্প্রতি দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির রাত্রীকালিন একটি টকশোতে বালিশ কাণ্ড নিয়ে প্রচারিত অনুষ্ঠানে তারা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় লিপ্ত হন। তাদের সে আলোচনা অবলম্বণে নিউজটি করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু তথ্য অন্যান্য গণমাধ্যমের বরাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা শহরে দুইশত থেকে কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত দামের বালিশ পাওয়া যায়। সাধারণ মধ্যবিত্তের বালিশের দাম দুইশ থেকে চারশ টাকার মধ্যে। ভালো তুলার বালিশের দাম ৫শ থেকে সাতশো টাকা? গুলশানের অভিজাত দোকানে পাখির পালকের বালিশের দাম ১০ থেকে কুড়ি হাজার টাকার মধ্যে। এসব বিদেশ থেকে আমদানী করা।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দামী বালিশ তৈরী করে VAN DER HILST. এই কোম্পানির হাতে বানানো সাধারণ বালিশের মূল্য ৪ হাজার ৯৯৫ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই কোম্পানী সম্প্রতি তাদের হাতে বানানো বালিশের গোল্ড এডিশন এনেছে যার মূল্য ৫৬ হাজার ৯৯৫ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বিশ্বে বালিশের যে দামই থাকুক, বাংলাদেশে বালিশ কেনায় প্রথম রেকর্ডটি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলে সরকারি টাকায় তার জন্য প্রতিটি ৭৮হাজার টাকা মূল্যের ৬টি বালিশ কেনা হয়েছিল। এটা প্রায় ৩০ বছর আগের কথা।

এখন সেই টাকার মান যেখানে, তাতে বলা যায় ৭৮ হাজার টাকা এখনকার ৭৮ লাখের মত। গণপূর্ত বিভাগের নথিপত্রে দেখা যায় ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ, বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল হোসেন সড়কের বাসা সংস্কার এবং নতুন আসবাবপত্রে সজ্জিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক পরিপত্রে (স্বারক নং ৬/৯১/ই/প্র) বলা হয়, ‘যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন ব্যবহার করবেন না, সে কারণেই ৬ নং শহীদ মঈনুল হোসেন সড়কের বাসভবনের সংস্কার এবং পূনঃবিন্যাস প্রয়োজন।

শেয়ার করুন: