একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন: নজির তৈরি করেছে মেঘনা-গোমতী সেতু প্রকল্প

২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী সেতুসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেঘনা-গোমতী সেতু ছাড়া আরও যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলো হল- পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নামের ট্রেন, গাজীপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর অংশে নির্মিত কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কড্ডা ও বাইমাইল সেতু এবং কালিয়াকৈর আন্ডারপাস।

দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়কে ঈদের আগে এসব ব্রিজ-ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের উদ্বোধন যানজট নিরসন করে মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও আরামদায়ক করবে বলে আশা করা যায়।

পঞ্চগড় এক্সপ্রেস উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও চালু করা হবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, উন্নয়নের গতিপথ বিচিত্র ও সম্প্রসারিত হওয়ার বিবেচনায় বৈদ্যুতিক ট্রেনসহ প্রয়োজনীয় সব পরিবহন ব্যবস্থা চালু সময়ের দাবি।

মেট্রোরেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা ইতিবাচক বলতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন উৎসবের সময় যেভাবে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়, এমনকি রেলওয়ে একটি অ্যাপ পরিচালনা ও সুষ্ঠুভাবে টিকিট বিক্রি করা যায় না, আগে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।

পণ্য ও যানবাহন চলার বিবেচনায় দেশের প্রধান মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী সড়ক নির্মাণ ছিল সময়ের দাবি। পুরনো সেতু দুটি ছিল সরু- মাত্র দুই লেনবিশিষ্ট; ফলে মেঘনা-গোমতী সেতুতে যানজট ছিল নিয়মিত ঘটনা। বিশেষত ঈদ ও যে কোনো উৎসবের সময় সেতু দুটি ও সংশ্লিষ্ট সংযোগ সড়ক যানজটে অচল হয়ে যাওয়া নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ফলে প্রশস্ত নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ ছিল অপরিহার্য। সরকার দ্রুত উদ্যোগ নেয়ায় এবারের ঈদুল ফিতর থেকেই চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ ২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী- সেতু দুটির সুফল ভোগ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

একই কথা প্রযোজ্য কোনাবাড়ী-চন্দ্রা ফ্লাইওভার ও কড্ডা-বাইমাইল সেতুর ক্ষেত্রেও। উত্তরবঙ্গের যাত্রী মানেই এলেঙ্গা-চন্দ্রার যানজটের চিন্তায় শিউরে ওঠা। নবনির্মিত সেতু ও ফ্লাইওভার উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ঈদযাত্রার ভোগান্তি লাঘব করবে বলে আমরা আশাবাদী।

২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন প্রকল্প ব্যতিক্রমী একটি নজির তৈরি করেছে। জাপানি কোম্পানির বাস্তবায়িত প্রকল্পটি যেমন নির্ধারিত সময়ের ৬ মাসের বেশি সময় আগে শেষ হয়েছে, তেমনি প্রকল্প দুটির বরাদ্দ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। জাপানি কোম্পানি সাশ্রয় হওয়া অর্থ সরকারকে ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। অবশ্য প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে হিসাব-নিকাশের পর প্রকৃত উদ্বৃত্ত অর্থের অঙ্ক নিশ্চিত করা যাবে।

যেখানে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানো ও কয়েকগুণ পর্যন্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনা, সেখানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কাজ শেষ ও অর্থ সাশ্রয় করে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার ঘটনা ইতিবাচক ও আশা জাগানিয়া বৈকি।

তাও আবার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় কয়েকজন জাপানি নাগরিক নিহত হলে চার মাসের বেশি সময় কাজ বন্ধ থাকার পর সহকর্মী হারানো জাপানিরা মানসিক বিধ্বস্ত থাকায় নিজেদের পক্ষ থেকে ৬ মাস প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন এবং সরকার তা মঞ্জুর করার পরও আগের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করেছে।

প্রশ্ন হল, জাপানি কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের আগে ও নির্ধারিত ব্যয় সাশ্রয় করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা কেন পারব না? মেঘনা-গোমতীর মতো অন্যান্য প্রকল্পও যেন অন্তত নির্দিষ্ট সময় ও ব্যয়ের মধ্যে শেষ করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

শেয়ার করুন: