প্রস্তুতি ম্যাচে বিশ্রামে অনেকেই

প্র্যাকটিস ম্যাচ মানেই পুরোদস্তুর প্র্যাকটিস ম্যাচ। চাইলে স্কোয়াডের ১৫ জনকেই ব্যাটিং-বোলিং করানোর সুযোগ থাকছে ২০১৯ বিশ্বকাপের ওয়ার্ম আপ ম্যাচগুলোয়। তাই সরকারি ম্যাচের তকমা নেই আজকের বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচেও। তাই মিছিল দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের হেভিওয়েটরা, মানে মূল ম্যাচের সম্ভাব্য একাদশের অনেকেই।

শুধু পাকিস্তান নয়, এ মাঠে পরশুর ভারত ম্যাচেও মাশরাফি বিন মর্তুজার খেলার সম্ভাবনা কম। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও তা-ই। তাতে আজকের ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্ব করার সম্ভাবনা বেশি। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে বিশ্রামপ্রার্থীদের তালিকা এখানেই শেষ নয়।

নিয়মিত একাদশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলাটা একরকম ‘ঐচ্ছিক’ই করে দেওয়া হয়েছে। মুশফিকুর রহিমের সে সুযোগ নেওয়ার সম্ভাবনা বরাবরই কম।

ঐচ্ছিক অনুশীলনেও নিয়মিত কেউ কি আর ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস মিস করবেন? তামিম হয়তো এ দুটি ম্যাচের একটিকে বেছে নেবেন। মাহমুদ উল্লাহর বেলাতেও একই ছাড়পত্র রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের প্রাধান্যই দেখা যাবে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে।

এসব হলো টিম নিউজ। আরো গভীরের খবর হলো, হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও পুনর্বাসনে আছেন অনেক ক্রিকেটারই। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা রয়েছে মাশরাফির। তাই অযথা ঝুঁকি নেবেন না। সৌম্য সরকারেরও সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। আয়ারল্যান্ডে চোট পাওয়া সাকিবকে গতকালের অনুশীলনে দেখা গেছে ফিটনেস টেস্ট দিতে।

সকালে হোটেল লবিতে বসে অবশ্য বলছিলেন যে, ‘বড় কোনো সমস্যা নয়।’ তবে অকারণ প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলিয়ে তাঁকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা টিম ম্যানেজমেন্টের নেই। ঝুঁকি অবশ্য সবার জন্যই রয়েছে। কে জানে, প্রস্তুতি ম্যাচেই চোটগ্রস্ত হন কি না আরো কেউ। বিশ্বকাপের দীর্ঘ আসরে সে দুর্ভাবনায়ও প্রস্তুতি ম্যাচের দলীয় ভাবনার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

প্রস্তুতি ম্যাচের ভাবনায় ঢিল পড়ার পেছনে আরেকটি যুক্তিও আছে। আয়ারল্যান্ডে ওরকম চারটি হাড়-কাঁপানো ম্যাচ খেলে আসার পর নিয়মিতদের বিশ্রাম প্রাপ্যই। প্রায় একই কন্ডিশনে পারফরম করে আসা ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ম্যাচে বেশি না ঘাঁটানোর পরিকল্পনার চর্চাই বেশি হয়েছে দলের অন্দরমহলে।

তবে গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে মেহেদী মিরাজ এসে বলে গেলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচের ফল গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এখানকার উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ আর সেটা করতে গিয়ে যদি জেতা যায়, তাহলে আয়ারল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ার শঙ্কাও থাকে না। ‘যেকোনো ম্যাচ জিতলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

আমাদেরও চেষ্টা থাকবে পাকিস্তান ম্যাচটা জেতার। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো এখানকার কন্ডিশনটা বোঝা’, ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলেন মিরাজ। সে বোঝার জন্য ম্যাচের কোনো এক ফাঁকে এক-দুই ওভার বোলিং করে যেতেও পারেন মাশরাফি।

তবে একজনের প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে নিশ্চিতভাবেই ‘ছুটি’ নেই। তিনি রুবেল হোসেন। সাইড স্ট্রেইনের কারণে আয়ারল্যান্ডে একটির বেশি ম্যাচ খেলেননি এ পেসার। তাই পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে রুবেলের খেলাটা নাকি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রস্তুতি এবং ফিটনেস পরীক্ষা—দুটিই যে জরুরি তাঁর জন্য।

এমন পরিস্থিতিতে আজকের পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে বাড়তি কোনো হুল্লোড় নেই। বরং কার্ডিফের উইকএন্ড শুরুর রাতে শহরের প্রাণকেন্দ্রের পাব-ক্লাবমুখী তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসই বেশি আকর্ষক মনে হলো।

অদ্ভুত একটা শহর। দিনের আলোতেও আপাত নির্জন কার্ডিফ শুক্রবার গভীর রাতে কী করে যে জনসমুদ্রে পরিণত হলো! স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেল, এটাই কার্ডিফ। নিয়ম করে জেগে ওঠে শুক্রবার রাতে। শনিবার গড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে রবিবার থেকে!

প্রস্তুতি ম্যাচকে ঘিরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাবনাকেও কেমন যেন মনে হচ্ছে কর্মদিবসের কার্ডিফ, নীরব! অবশ্য জেগে উঠবে, বিশ্বকাপের ‘উইকএন্ড নাইট’ শুরু হতেই। ওটা ২ জুন থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। আজ এবং পরশুর মহড়ায় থাকছে শুধু এখানকার উইকেটে বোলারদের ঠিক লেংথটা জেনে নেওয়া এবং ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেটের বাউন্সটা পরখ করা।

বাকি সব—মানে হার-জিত আপাতত ‘পিইসি’ কিংবা ‘জেএসসি’র মর্যাদা পাচ্ছে দলের কাছে। গোল্ডেন জিপি এ পেলে ভালো, তবে আখেরে ওটা তো আর ক্যারিয়ার গড়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে না!

শেয়ার করুন: