নুসরাতে বিশাল জয়ের পেছনের মূল রহস্য

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে অভিনেত্রী নুসরাত জাহান পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট আসনে কংগ্রেসের হয়ে অংশ নিয়ে বিপুল পরিমাণ ভোটে জয় লাভ করেছেন। যা রাজ্যে শাসক দলের জয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগে থেকেই আসনটি তৃণমূলের ছিল। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু এখানে ভোটে জয় লাভ করবেন তা হয়তো ভাবেননি জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীও।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইছামতীর পাড়ের এই আসনে ধর্মীয় মেরুকরণ ছিল স্পষ্ট। সেই মেরুকরণের ফসলই ঘরে তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাম ভোট যখন হুহু করে বিজেপির ঝুড়িতে পড়েছে, সেই সময়ে বসিরহাটের পরিসংখ্যান ভিন্ন কথা বলছে। ওখানে বাম ভোট গেছে তৃণমূলেই।

মেরুকরণের ফলেই যে ওখানে ব্যবধান এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলের নেতারাই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, মানুষ ভোট দিয়েছেন। অন্য জায়গার মতো বাম ভোট বিজেপিতে যায়নি।

আর বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর মতে, আমরা ভেবেছিলাম, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাবে সিপিআই এবং কংগ্রেস। বাস্তবে তা হয়নি। সেই জন্যই ওখানে ব্যবধান এত বড় হয়েছে।

২০১৪ সালে বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলির ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৮.৬৫ শতাংশ ভোট। তা ধরে রেখে এবার তৃণমূলের ভোট বেড়েছে আরও ১৫.৯১ শতাংশ। নুসরাত পেয়েছেন ৫৪.৫৬ শতাংশ ভোট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, বসিরহাটে বামেদের ভোট কার্যত বিভাজিত হয়েছে। তাতে সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল।

তাদের মতে, ওখানে হিন্দুত্বকে ঠেকাতে তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছিলেন বসিরহাটের ভোটারেরা। সেই জন্যই বঙ্গেও যখন নরেন্দ্র মোদির পক্ষে ভোটবাক্স ভরিয়েছেন ভোটদাতারা, সেই সময়ে সব হিসাব পিছনে ফেলে সেখান থেকে ৩,৫০,৩৬৯ ব্যবধানে জিতেছেন নুসরাত। যিনি নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া তথ্য অনুযায়ী সম্ভবত রাজ্যের কনিষ্ঠতম সাংসদ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৭,৮২,০৭৮টি। নুসরাতের প্রতিপক্ষ বিজেপির সায়ন্তন ভোট পেয়েছেন ৪,৩১,৭০৯টি।

হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, বসিরহাট দক্ষিণ, বসিরহাট উত্তর এবং বাদুড়িয়া— সব বিধানসভা আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। একদা বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। এবার সেখানেও বিজেপির থেকে ১৪ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে রাজ্যের শাসক শিবির।

বাদুড়িয়ার বিধায়ক কংগ্রেস প্রার্থী কাজি আব্দুল রহিম। সেখানে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। হাড়োয়ায় ৯৭ হাজারের বেশি ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে তৃণমূল। মিনাখাঁয় সেই ব্যবধান ৬৬ হাজারের বেশি। বসিরহাট উত্তরে এবার তৃণমূল এবং বিজেপির ভোটের ফারাক প্রায় ৮৩ হাজার। জেতার পরে মাঝরাতে বসিরহাটে পৌঁছে শংসাপত্র নেন নুসরাত।

শেয়ার করুন: