মহাসড়কে গরু-ছাগল উঠলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে গরু, মহিষ, ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশু মহাসড়কে প্রবেশ করালে বা মহাসড়কে অবস্থান করালে সংশ্লিষ্ট মালিককে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে।

এমন বিধান রেখে ‘মহাসড়ক আইন- ২০১৯’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের ওপর কোনো পণ্যসামগ্রী বা মালামাল মজুদ রাখলে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

খসড়া আইনের বিষয়ে এখন সংশ্লিষ্টদের মতামত নিচ্ছে মহাসড়ক বিভাগ। মতামত নেয়ার পর খসড়া চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে মহাসড়ক আইনটি আছে তা অনেক পুরনো। ‘দ্য হাইওয়ে অ্যাক্ট- ১৯২৫’ দিয়ে আমরা চলছি। এর মধ্যে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই এ ক্ষেত্রে নতুন আইন করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন মহাসড়ক আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছি। এখন স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিচ্ছি। মতামত পাওয়ার পর আমরা এগুলো নিয়ে বসব, যেগুলো বিবেচনায় নেয়া যায় সেগুলো নিয়ে খসড়া ফাইনাল করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য।’

খসড়া আইন অনুযায়ী, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে পদযাত্রা করা যাবে না বা এ আইনের অধীনে অনুমোদিত কার্যকলাপের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এর কোনো স্থানে অবস্থান করা যাবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে কমপক্ষে এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

‘ধীরগতির জন্য নির্ধারিত লেন ছাড়া মহাসড়কে মোটরযান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চালানো যাবে না বা রাখা যাবে না। মহাসড়কে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে নির্ধারিত গতিসীমা ছাড়া কোনো মোটরযান চালানো যাবে না। কেউ এ নিয়ম না মানলে তিনি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন’- উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।

‘পার্কিংস্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে মোটরযান পার্কিং করা যাবে না এবং পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে অধিদফতরের নির্দেশনা মানতে হবে। এ বিধান লঙ্ঘনে সড়ক পরিবহন আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ট্রাক বা এমন মোটরযান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনে কোনো মাছ ও পশুপাখি বহন কিংবা সঙ্গে নেয়া যাবে না। অধিদফতর নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে গবাদিপশু মহাসড়কে প্রবেশ বা মহাসড়কে অবস্থান করানো যাবে না। মহাসড়কে এমন মোটরযান চালানো যাবে না যা থেকে মহাসড়কে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ পড়ে। এ বিধান লঙ্ঘন করলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে।’

একমুখী পথে মোটরযান ঘুরিয়ে বিপরীত দিকে চালানো যাবে না বা অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দিকে মোটরযান চালানো যাবে না। এ বিধান লঙ্ঘনে খসড়া আইনানুযায়ী কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, সরকার প্রয়োজন-মাফিক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যেকোনো সড়ককে মহাসড়ক, প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণা করতে পারবে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকার কিছু বিষয় বিবেচনা করবে- এক্সপ্রেসওয়ে শুধু দ্রুতগতির (সরকারনির্ধারিত গতিসীমা) যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নির্মিত হবে।

এতে বলা হয়, প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের মূল উদ্দেশ্য হবে যানবাহন চলাচলে গতিশীলতা নিশ্চিত করা। এ উদ্দেশ্যে মহাসড়কে যত্রতত্র প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে হবে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা থেকে মহাসড়কে অবাধ বা সরাসরি প্রবেশাধিকার বা বহির্গমনাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এক্সেল লেন বা মার্জিং লেনের মাধ্যমে মহাসড়কে প্রবেশ ও বহির্গমনে সুযোগ রাখতে হবে।

অধিদফতরের পূর্বানুমতি ছাড়া অন্য কোনো সড়ক বা মহাসড়ক প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে অধিদফতর অনুমোদিত প্রকৌশল নকশা অনুযায়ী, প্রয়োজন অনুসারে ইন্টারসেকশন, ইন্টারচেঞ্জ বা এক্সেল লেন বা মার্জিং লেনের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও পরিচালনা বা এ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে ওই ভূমি ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন- ২০১৭’ অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা যাবে। এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে তা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন অনুযায়ী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।

যানবাহনের ওভারলোডিংজনিত কারণে মহাসড়কের ক্ষতি কমানো এবং সর্বোপরি মহাসড়কের স্থায়িত্ব, সার্বিক নিরাপত্তা ও যানবাহন পরিবহনের গতিশীলতা নিশ্চিতে এ আইনের মাধ্যমে যানবাহনের ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। অনুমোদিত ওজনসীমার অতিরিক্ত ওজন বহন করে কোনো যানবাহন মহাসড়ক বা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতু কালভার্ট বা অন্য যেকোনো অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন করলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের মালিক ও চালক, অধিদফতরের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী, শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিরাপদে চলাচলের জন্য মহাসড়কে যথাযথ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। এ আইনের মাধ্যমে অধিক্ষেত্রাধীন মহাসড়ক বা নিয়ন্ত্রণাধীন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং স্থাপনার অবৈধ দখল অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া নাগরিক সেবা দেয়া সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউটিলিটি স্থাপনের জন্য মহাসড়ক ব্যবহার করতে পারবে না। এ ধরনের স্থাপনা মহাসড়কে অবৈধ অনুপ্রবেশ হিসেবে পরিগণিত হবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, মহাসড়কে নিরাপদে যানবাহন চলাচল বা মহাসড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন ইউটিলিটি মহাসড়কে স্থাপনের অনুমতি না দেয়ার অধিকার অধিদফতর বা অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্তরা সংরক্ষণ করবে।

মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও মেরামতের জন্য একটি তহবিল থাকবে, যার কাঠামো, কার্যপরিধি ও কর্মকাণ্ড সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ‘তহবিল বোর্ড আইন- ২০১৩’ এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে মহাসড়কের সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে জলবায়ু সহনশীল টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর’- বলা হয়েছে খসড়া আইনে।

এতে আরও বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও পার্বত্য অঞ্চলের জন্য ভূমিধসজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিষয়টি ওই এলাকায় মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয় হবে। সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে প্রকৌশলগত যে বিষয়গুলো অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিবেচনায় আনা প্রয়োজন সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

cowনতুন মহাসড়ক আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সংগতি রেখে মহাসড়ক করিডর বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে বৃক্ষরোপণ করবে অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলের প্রকৌশলগত নিরাপত্তা, সড়ক উন্নয়নের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পেভমেন্টের (সড়কের ওপরের স্তর) স্থায়িত্ব ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহাসড়কের পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ল্যান্ডস্কেপিং করবে অধিদফতর।

শেয়ার করুন: