সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ চলছে। বাংলাদেশেও সে প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু আমি আন্তরিক ধন্যবাদ দেব আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংস্থাগুলোকে। যাদের জন্য মানুষ নিরাপদে চলতে পারছে, আরামে ঘুমাতে পারছে। আজ আমরা কিন্তু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
মঙ্গলবার গণভবনে পেশাজীবীদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কবি, সাহিত্যিক, বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ইফতার করেন প্রধানমন্ত্রী। ইফতারের আগে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই আপনারা যার যার জায়গা থেকে নিজের সাধ্যমতো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। আমরা যেন হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারি, বাংলাদেশ যেন বিশ্বের মানচিত্রে গৌরবের আসন পেতে পারে।
তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন, আজ সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। সবাইকে এই প্রচেষ্টা করতে হবে, যাতে করে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে সব সময় একটি বিষয় থাকে যে, ভোট ও ভাতের অধিকারে যারা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই ভোট ও ভাতের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর আমি এখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সাক্ষাৎ করি। কিন্তু আপনারা জানেন যে, আমার চোখে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর বয়সও তো হয়েছে, বৃদ্ধ হয়ে গেছি। ডাক্তারেরও নিষেধাজ্ঞা আছে, যে কারণে সেই পর্বটা আজ করতে পারছি না বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। আজকে ইফতারের দাওয়াত পেয়ে যারা গণভবনে এসেছেন, তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সবার কাছে দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি যে, মাহে রমজান মাসে কোনো দোয়া করলে সে দোয়া কবুল হয়। আমি আপনাদের এতটুকু বলব, বাংলাদেশে যেন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে, বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারাটা সূচিত হয়েছে, আমরা যেন ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। বাংলাদেশের একেবারে গ্রামের মানুষ যেন সুন্দর-উন্নত জীবন পায়, সুস্থ জীবন পায়, আমরা সেটাই কামনা করি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। সাড়ে তিন বছরে তিনি অসাধ্যসাধন করে গেছেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের সে উন্নয়নের যাত্রাটা ব্যাহত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। আমি এবং শেখ রেহানা দেশে ছিলাম না বলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম। আমরা বাবা-মা স্বজনদের হারিয়েছি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছিল দেশের উন্নয়ন ও সম্ভাবনাকে।
দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় আমার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা সারাটা জীবন যে সংগ্রাম করে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই স্বাধীনতার সুফলটা যেন এ দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে দিতে পারি। বাংলাদেশের মানুষ যেন, ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পায়, শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায়। উন্নত জীবন পায়। মানুষের মধ্যে যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন বাংলাদেশ গড়তে পারি, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।