বালিশের দাম ৫৯৫৭ টাকা, যা বললেন গণপূর্তমন্ত্রী

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শ্রম বাজারের মূল্য বাংলাদেশ! এমন প্রশ্ন তোলা কী ভুল হবে? যখন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি বালিশের মূল্য ৫৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ কর্মরতদের ফ্ল্যাটে তুলতে খরচ হয় ৭৬০ টাকা।

এর পর কী বলার সুযোগ আছে, বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বেশি নয়? রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে কী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না পুকুর চুরি হচ্ছে এই প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একমাত্র খোরাক হয়েছে বেশ কয়েকদিন যাবৎ।

তাদের সকলের প্রশ্ন এমন কাজ যদি আমি পেতাম। কে এই বরপুত্র যিনি এমন কাজের দরপত্র পেয়েছেন, জানতে চেয়েছেন বিশিষ্ট্য সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হরিলুট হয়েছে।

এই বালিশ নিয়ে ইতোমধ্যে বাম সংগঠন অভিনব প্রতিবাদও করে ফেলেছেন, কী আছে এই বালিশে? কেন এত বালিশ নিয়ে সাধারণ থেকে সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিমকে প্রশ্ন করা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছে আমার দায়িত্ব ভার গ্রহণের একবছর আগে। তবে আপনাদের আমি একটি কথা বলতে চাই আমি নিজে দুর্নীতি করব না কাউকে দুর্নীতি করতে দিবো না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যেই আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। দেখতে পারবেন আমি কী করি? আমি একটি কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, যত ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোক না কেন এমন কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের কাউকে ছাড় দিবো না। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করব পুরো দেশবাসীর কাছে তখন বুঝতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাকে কিন্তু কেউ কিছু বলেনি, আমি নিজ তাগিদে উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ দুটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি, তারা সাত কার্যদিবসের মাঝে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তখন যে বা যারাই অপরাধ করে থাকুক তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারির কথা জানান। সে সময় তিনি বলেন, আমি এখনি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তদন্তের মাধ্যমে যে সত্য বেরিয়ে আসবে তাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয়। আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

এদিকে যে সাংবাদিক দেশবাসীর সামনে এই তথ্য তুলে ধরেছেন, তার কাছে আলোচক প্রশ্ন রেখে ছিলেন, আপনি কী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন, কেন একটি বালিশের দাম ৫৯৫৭ টাকা এবং কর্মরতদের ফ্ল্যাটে তুলতে এক একটি বালিশ ৭৬০ টাকা মুজরি লেগেছে? ইতোমধ্যে ১৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। বালিশটি আসলে কী দিয়ে তৈরি হয়েছে জানতে চেয়ে ছিলেন?

এর উত্তরে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বলেন, দায়িত্বরত সকল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি এবং সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক ও গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সাথে কথা হয়, তারা আমাকে বলেছেন, পিডব্লিডি’র রেট শিডিউলের মাধ্যমে সকল জিনিস পত্র ক্রয় করা হয়েছে এবং ফ্ল্যাটে তোলা হয়েছে শ্রম মূ্ল্যের মাধ্যমে।

আর যেগুলো জিনিস সরকারি ক্রয়নীতি মালার মাধ্যমে কেনা সম্ভব হয়নি, সেগুলো উন্মক্ত দরপত্রের মাধ্যে ক্রয় করা হয়েছে। এবং শ্রম মূল্যের মাধ্যমে তা ফ্ল্যাটে তোলা হচ্ছে এখানে আইনের ব্যতি রেখে কোন কিছু করা হয়নি। এর মধ্যে বালিশ ৫৯৫৭, টেলিভিশন ৮৭ হাজার টাকা, ঘর পরিস্কার করার বেকিউম ক্লিনার ১২০১৮ টাকা, চাদর-ঝাড়ুসহ ঘরের আসবারপত্র ক্রয় করা হয়।

তখন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা বালিশ তোলার শ্রম মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অনুসন্ধান মূলক সাংবাদিক বলেন, সরাকরে ক্রয় নীতিমালাই এসব বিষয়ের কথা নেই।

তাই উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এসব ক্রয় করা হয়েছে এবং শ্রম মূলের মাধ্যমে ফ্ল্যাটে তুলা হয়েছে, যা গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রণালয় অর্থাৎ পিডব্লিডি’র রেট শিডিউলের মাধ্যমে নেই। তাই উন্মুক্ত দর-পত্রের মাধ্যমে ক্রয় ও তোলা হয়েছে এসব জিনিসপত্র। এবং তারা আমাকে বলেছে যথাযথ নিয়মের মাধ্যমেই এসব জিনিস ক্রয় করা হয়েছে। এবং ফ্ল্যাটে তোলা হয়েছে। এখানে কোন আইনের ব্যপ্তয় হয়নি।

এরপর আবার আলোচক প্রশ্ন রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর কাছে, নিয়মে কী আছে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এত বেশি দামে ক্রয় করার, না সর্বনিন্ম দরতার কাছ থেকে ক্রয় করার?

তখন মন্ত্রী বলেন, আমি জানি, সবচেয়ে কম দামে যে দরপত্র আহ্বান করবে, সেই কাজ পাবে। ফের সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রশ্ন রাখেন, একটি বালিশের দাম কী করে ৫৯৫৭ টাকা হয়? তখন মন্ত্রী পুনরায় আশ্বস্ত করে বলেন, আমার প্রতি আপনারা আস্থা রাখুন, দেখুন আমি কী করি। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, আমিও এক চুল পিছপা হবো না। দেশবাসীকে আমার প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন: