ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রপ্তানির পদক্ষেপ নেওয়া হবে: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি বছর ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিন্তু এখন চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও কম। যার কারণে ধানের দাম নিয়ে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কৃষককে বাঁচাতে হবে।

আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যেটা করতে পারি, সেটা হলো আমরা চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করে সীমিতকরণ করতে পারি। সরকারিভাবে আমরা এই কাজটি করব। চাল আমদানি আমরা পুরোপুরি বন্ধ করি দিতে পারিনা। পাশাপাশি চাল রপ্তানির দিকেও আমাদের জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রপ্তানির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

রোববার (১৯ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে কৃষি ও এর উপখাতগুলোতে সরকারের বরাদ্দ ও বিশেষ গুরুত্ব প্রস্তাব হিসেবে অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশমালা প্রদান করেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সবজির উৎপাদনও আমাদের অনেক হচ্ছিল। কৃষকরা দাম পাচ্ছিল না এবং এগুলো পচে যাচ্ছিল। আমরা রপ্তানির ব্যবস্থা করলাম। রপ্তানি খরচ দিতে পারে না বলে আমরা সেখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। ভর্তুকি দিয়ে আমরা সেই কাজটি করছি। এর কারণে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চার নম্বরে। রপ্তানি করার কারণে এর বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। সবজিতে অন্তত দামটা পাচ্ছে কৃষক। একইভাবে চালও ভর্তুকি দিয়ে রপ্তানি করা যেতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন সারাবিশ্বে খাদ্যের জন্য হাহাকার ছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বেই খাদ্যের উৎপাদন অনেকগুন বেড়ে গেছে। আল্লাহর রহমতে এ বছর আমরা অনেক বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পেরেছি। আমাদের যেমন বেশি উৎপাদন হয়েছে, আশপাশের দেশেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। বাইরে যদি চাহিদা থাকত, তাহলে আমরা রপ্তানি করতে পারতাম। বাইরেও সেইভাবে চাহিদা নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যা-যা করা দরকার, সেগুলোর প্রতিফলন আপনারা দেখতে পাবেন। আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা অবশ্যই সু-বিবেচনা করবেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা করেন এবং এই সকল বিষয়ে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ। সেই ৯৬ সালে তিনি কৃষিখাতে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি নেওয়ার যে সাহস করেছিলেন, তখন বিষয়টি সত্যই অকল্পনীয় ছিল, কিন্তু তার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি। শুধু সবজি নয়, যে বছর যে পণ্য বেশি উৎপাদন হবে সেগুলোই রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। তাহলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ব্যবধান হবে না। ন্যায্য দামটা কৃষক পাবেন।

কৃষি যন্ত্রপাতির বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সরকার নামমাত্র মূল্যে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো দেয়, তারপরে সেগুলো কৃষকরা নিতেও চায় না, জোর করে দেওয়া লাগে।

সবাইকে অবহিত করতে হবে যদি কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন, তাহলে উৎপাদন বাড়বে। ব্যয়ও কমে যাবে। এই ব্যয় কমানোর জন্যও আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আগামীতে যে কাজটি করব, উৎপাদন কম-বেশি যাই হোক না কেন আমরা যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করণে জোড় দিব। কৃষি যন্ত্রপাতি আমরা নিয়ে এসে রেখে দেবো। যখন লাগবে তখন ব্যবহার করবো। উৎপাদন করে তারা (কৃষক) যদি উৎপাদনের খরচ না পায়, তাহলে একদিকে তারা নিরুৎসাহিত হবে।

অন্যদিকে আমরা মনে করি, এটি সরকারের জন্য একটি অনৈতিক বিষয়। সরকারকে সবদিকেই দেখতে হবে, উৎপাদনও দেখতে হবে, উৎপাদনের জন্য সহায়ক যা আছে, এগুলোরও সমাধান দিতে হবে। এটা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এটা অবশ্যই করণীয়।

শেয়ার করুন: