টাকা লাগবে না, বিনামূল্যে খেয়ে যান!

সাতক্ষীরা শহর থেকে ৬ কি.মি. দূরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অবস্থিত। মেডিকেল কলেজের সামনেই ‘গরীবে নেওয়াজ’ নামের হোটেলটির অবস্থান।

এই হোটেলটি আর পাঁচটা হোটেলের চেয়ে আলাদা। কোনো খাবারের জন্য আলাদা নয় এই হোটেলটি। হোটেলটির আলাদা বৈশিষ্ট হচ্ছে এর মালিক আব্দুর রশিদ সরদারের মানবিকতা।

হোটেলের সামনেই রয়েছে ঝুলন্ত একটি সাইন বোর্ড। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘তেল মাথায় দেন, গামছা নেন, গোসল করেন, ভাত খান, পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন।’

জেলার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চরবালিথা গ্রামে আব্দুর রশিদ সরদারের বাড়ী। তবে তিনি বর্তমানে তার স্ত্রী ফজিলা খাতুন ও ছেলে সাগরকে নিয়ে এই হোটেলেই থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ছয় বছর আগে ভ্যানের উপর ভ্রাম্যমাণ ভাবে ভাত বিক্রি করতেন আব্দুর রশিদ সরদার। ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে অসহায় আর দরিদ্র মানুষের দুদর্শার কথা ভেবে সাতক্ষীরা মেডিকেলে কলেজের সামনে এই ‘গরীবে নেওয়াজ’ হোটেলটি তৈরী করেন তিনি।

প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে এখানে চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই টাকার অভাবে না খেয়ে থাকেন। দুর্দশাগ্রস্ত সেসব মানুষের ক্ষুধা মেটাতে মেডিকেলের সামনেই তিনি এই ‘গরিবে নেওয়াজ’ হোটেল তৈরী করেছেন। রোজ চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্র রোগী বা রুগীর সাথে থাকা স্বজনদের কাছে টাকা না থাকলে বিনামূল্যে খেতে দেন রশিদ সরদার তার এই হোটেলে।

তাছাড়া যদি সাধারণ মানুষের কাছেও টাকা না থাকে তবে তিনি ফ্রিতে খেতে দেন। শুনতে খুব বিস্ময়কর লাগছে। এখনকার দিনে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির মধ্যে দিয়েও আব্দুর রশিদ সরদার বিপদাপন্ন মানুষদের বিনামূল্য খাওয়ার এই হোটেল নিয়ে মটেও উদ্বিগ্ন হয় বরং দরিদ্র আর অসহায় মানুষকে ফ্রি খেতে দিয়ে তিনি তৃপ্তি পান। শুধু খাওয়া নয় সাথে গোসলেরও ব্যবস্থা রয়েছে গরীবে নেওয়াজ হোটেলটিতে।

এই মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা এক রুগীর স্বজন মো. কামাল হোসেন জানান, রশিদ চাচার হোটেলে যেয়ে যদি কেউ বলে টাকা নেই তবে তাকে বিনামূল্যে খেতে দেন তিনি। প্রতিদিন অনেক অসহায় মানুষের ক্ষুধা মেটে গরীবে নেওয়াজ হোটেলের খাদ্যে।

কথা হয় এই গরীবে নেওয়াজ হোটেল মালিক আব্দুর রশিদ সরদারের। ‘গরীবে নেওয়াজ’ নিয়ে আব্দুর রশিদ সরদার বলেন, কেউ যদি জানায় কাছে টাকা নেই তবে তাকে বিনামূল্য খাওয়ায়। তাছাড়া অনেক গরীব অসহায় মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন যাদের কাছে টাকা না থাকায় অনাহারে থাকেন।

এই সকল বিপদগ্রস্ত মানুষদের বিনামূল্য খাবারের জন্য এই হোটেলটি করেছেন তিনি। তিন বছর পার হয়ে গেল এই হোটেলটি করেছেন তারমধ্য প্রতিদিনই অনেক ক্ষুধার্ত মানুষকে নিজের সমার্থ অনুযায়ি বিনামূল্য খেতে দেন তিনি।

তিনি আরও জানান, যতদিন সমার্থ থাকবে এই হোটেলটি চালু রাখবেন। তাছাড়া, বিনামূল্য অসহায়দের খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি তৃপ্তি পান বলে জানান।

শেয়ার করুন: