মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান!

স্কুলটিতে মাত্র দুইজন শিক্ষক। এর মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক ও অন্যজন সহকারী শিক্ষক। আর এই দুইজন দিয়েই চলছে অধ্যায়নরত ১৯৫ জন শিক্ষার্থীর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ফলে এই শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠ পাঠদান গ্রহণ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। রমযানের ছুটি থাকায় আপাতত বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকলেও ছুটি শেষে ২জন শিক্ষক দিয়ে কোনমতে চলবে বিদ্যালয়টি।

বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করলেও সমাধানে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।

বিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৯৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১৫, প্রথম শ্রেণিতে ৩৩, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৬জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৮, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪০, পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৩জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

তাদের পাঠদানের জন্য ডিসেম্বর ২০১৮ মাসে শিক্ষক ছিলেন ৭ জন এর মধ্যে ডিপিএড প্রশিক্ষণে গমন করেন ৩জন, ৪ জন শিক্ষক দিয়ে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত চলমান থাকলেও তন্মধ্যে ১জন শিক্ষক বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যান পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে ১জন শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান।

বর্তমানে ২ জন শিক্ষকদ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে উপজেলা সদরে গেলে বিদ্যালয়টি সেদিনের মত ১ জন নিয়ে পরিচালিত হয়। ফলে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য বলেন, ৩জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর কিভাবে শিক্ষক বদলী হয় ? রমযানের ছুটির পর বিদ্যালয় খুললে আবারও সেই ২জন দিয়ে বিদ্যালয় চলবে! দ্রুত এর সমাধান চাই।

বিদ্যালয়টির সভাপতি বিপুল সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক সাথে ৩জন ডেপুটেশন আর শিক্ষক না থাকার পরও ১ জন শিক্ষককে বদলী করা নজিরবিহীন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। তিনি দ্রুত বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মিন্টু মিয়া জানান, আমি শিক্ষা অফিসকে শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে জানিয়েছি অপেক্ষায় আছি তারা কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান করে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বাবলু কুমার সরকার বলেন, ২ জন শিক্ষক দিয়ে কি ৬ জন শিক্ষকের কাজ করা সম্ভব ? ক্লাসে পাঠদানের বাইরে মাঝে মধ্যে অফিসিয়াল কাজে সদরে যেতে হয়। এছাড়াও অফিসের চাহিত তথ্য ফরম পূরণে ব্যস্ততা কাটে স্কুলে মাঝে মধ্যে।

একসাথে পাঠদান ও অফিসিয়াল কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আমিসহ ২জন শিক্ষক দিয়ে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে কিভাবে শ্রেণিকক্ষ সামাল দিচ্ছি নিজেই জানিনা। আর কত দিন এভাবে চলবে জানিনা। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল হক বলেন, বিদ্যালয়টির ১ জন শিক্ষক নিয়মবর্হিভূত ভাবে বদলী হওয়ায় শিক্ষক শূণ্যতা হয়েছে। এমনটি হওয়ার কথা নয়। আগামী সোমবার শিক্ষা কমিটির মিটিং রয়েছে সেখানে বিষয়টি সমাধানে আলোচনা করে ডেপুটেশনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রস্তুাব প্রেরণ করা হবে। আশা করছি দ্রুত বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক পাঠদান ফিরে পাবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। বালিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ডেপুুটেশন প্রস্তাবের জন্য আবেদন করতে বলব। ডেপুটেশনের প্রস্তাব দেওয়া মাত্র সেটি অনুমোদন করে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করা হবে, ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পাবে বিদ্যালয়টি।

শেয়ার করুন: