বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চমক নিয়ে আসছে অ্যাডভেঞ্চার-৫

নতুন সাজে সজ্জিত ক্যাটামেরিন পদ্ধতির অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযান আজ থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে আবারও যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। দিবা সার্ভিসে অত্যাধুনিক এই নৌযানটি চলাচল করবে। বিলাসবহুল ও প্রযুক্তিনির্ভর এই নৌযানের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড।

এটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল নৌবন্দর থেকে ঢাকা সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওনা দেবে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। এরই মধ্যে নৌযানটির অধিকাংশ আসন বুকিং হয়ে গেছে।

যাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ, আরও আরামদায়ক ও সেবার মান বাড়াতে অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটি নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করে তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতল নৌযানটিতে ৫৮৫টি আসন রয়েছে।

পুরো নৌযানটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সমুদ্রগামী জাহাজের আদলে তৈরি নৌযানটিতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে ক্যাফেটেরিয়া, নামাজের স্থান এবং ওয়াইফাই সুবিধাসহ রাখা হয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা।

অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানের আসনগুলো বিমানের সিটের আদলে তৈরি। এর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিদেশি পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের দিয়ে করিডোর, বারান্দাসহ ভেতরের বিভিন্ন অংশে নান্দনিক ডিজাইন ও ডেকোরেশন করানো হয়েছে। এসব নকশা ও কারুকাজ যে কারও মন কাড়বে।

ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো পুরো নৌযান। এর বাইরের দিকে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে নদী, পানি, আকাশ আর আশপাশের মনোরম দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আসনে বসেও উপভোগ করা যাবে বাইরের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসবহুল এই নৌযানটি নগরীর অদূরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় এলাকাসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতীরে শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ডকইয়ার্ড ও খুলনা ডকইয়ার্ডে নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়।

অ্যাডভেঞ্চার-৫ নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির তৃতীয় নৌযান। অ্যাডভেঞ্চার-১ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে আরও দুটি লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নদীপথে চলাচল করছে।

কোম্পানির বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক ও নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তিন বছর আগে অ্যাডভেঞ্চার-৫-এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত ঈদুল ফিতরের আগে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে এটি চলাচল শুরু করে। কিন্তু কয়েকদিন পর অবকাঠামোগত কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। ত্রুটিগুলো শুধরানোর জন্য ফের নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটি ১৩২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৫২ ফুট দৈর্ঘ্য করা হয়েছে। প্রস্থ করা হয়েছে ৪৩ ফুট। এতে করে যাত্রী ধারণক্ষমতা এবং সুবিধা অনেক বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌযানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপন, বয়া, লাইফ জ্যাকেট ও নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের জন্য রয়েছে উন্মুক্ত ওয়াইফাই ব্যবস্থা।

তিনি জানান, এতে চার ক্যাটাগরির আসন বিন্যাস করেছে। ভিআইপি জোনে প্রতি আসনের ভাড়া এক হাজার টাকা, প্রিমিয়াম ক্লাস ৯০০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ৮০০ টাকা এবং ইকোনোমি ক্লাস ৬০০ টাকা। আর উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন থাকায় এ নৌযানটি ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।

নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরিশাল মেট্রোপলিন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটির হুইল হাউজে (চালকের কক্ষ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে।

এর রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতির। পাশাপাশি এতে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে নৌযানটির চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘনকুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।

তিনি আরও জানান, জাহাজে কয়েক স্তর বিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। অর্থাৎ এ জাহাজটিতে সম্ভাব্য সবধরনের প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি জানান, নতুন এই লঞ্চ যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নতুন একটা ধাপে নিয়ে যাবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, নৌযানটি যাত্রীদের চমকে দেবে। তবে নৌযানটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়া বাড়ানো হয়নি। সব শ্রেণির ভাড়া যাত্রীদের আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে।

শেয়ার করুন: